পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা (፩ (፩ (፩ টকা বাজিল। বেশ বােঝা যাইতেছে, যে সংকট উপস্থিত হইয়াছে তাহা সুচরিতা জানে, সুতরাং নিশ্চয়ই তাঁহা ললিতার অগোচর নহে, তবে ললিতা কেন— কিছুই স্পষ্ট হইল না। ’ ললিত কহিল, “বাবাকে তো জিজ্ঞাসা করতেই হবে। বিনয়বাবু সন্মত আছেন জানতে পারলেই তাকে বলব। তিনি কখনোই আপত্তি করবেন না— তাকেও আমাদের এই বিদ্যালয়ের মধ্যে থাকতে शूk | আনন্দময়ীর দিকে ফিরিয়া কহিল, “আপনাকেও আমরা ছাড়ব না।” আনন্দময়ী হাসিয়া কহিলেন, “আমি তোমাদের ইস্কুলের ঘর ঝাঁট দিয়ে আসতে পারব। তার বেশি কােজ আমার দ্বারা আর কী হবে ?” বিনয় কহিল, “তা হলেই যথেষ্ট হবে মা ! বিদ্যালয় একেবারে নির্মল হয়ে উঠবে।” সুচরিতা ও ললিতা বিদায় লইলে পর বিনয় একেবারে পদব্রজে ইডেন গার্ডেন অভিমুখে চলিয়া গেল। মহিম আনন্দময়ীর কাছে আসিয়া কহিলেন, “বিনয় তো দেখলুম। অনেকটা রাজি হয়ে এসেছে— এখন যত শীঘ্র পারা যায় কাজটা সেরে ফেলাই ভালো- কী জানি আবার কখন মত বদলায় ।” আনন্দময়ী বিস্মিত হইয়া কহিলেন, “সে কী কথা ! বিনয় আবার রাজি হল কখন ? আমাকে তো কিছু বলে নি ।” মহিম কহিলেন, “আজই আমার সঙ্গে তার কথাবার্তা হয়ে গেছে। সে বললে, গোরা এলেই দিন স্থির করা যাবে ।” আনন্দময়ী মাথা নাড়িয়া কহিলেন, “মহিম, আমি তোমাকে বলছি, তুমি ঠিক বোঝ নি।” মহিম কহিলেন, “আমার বুদ্ধি যতই মোটা হােক, সাদা কথা বােঝবার আমার বয়স হয়েছে এ নিশ্চয় জেনে ৷” আনন্দময়ী কহিলেন, “বাছা, আমার উপর তুমি রাগ করবে। আমি জানি, কিন্তু আমি দেখছি। এই নিয়ে একটা গোল বাধবে ।” মহিম মুখ গভীর করিয়া কহিলেন, “গোল বাধালেই গােল বাধে।” আনন্দময়ী কহিলেন, “মহিম, আমাকে তোমরা যা বল সমস্তই আমি সহ্য করব, কিন্তু যাতে কোনাে অশান্তি ঘটতে পারে তাতে আমি যোগ দিতে পারি নে- সে তোমাদেরই ভালোর জন্যে ।” মহিম নিষ্ঠুরভাবে কহিলেন, “আমাদের ভালাের কথা ভাববার ভার যদি আমাদেরই পরে দাও তা ইলে তোমাকেও কোনাে কথা শুনতে হয় না, আর আমাদেরও হয়তাে ভালেই হয়। বরঞ্চ শশিমুখীর থিয়েটা হয়ে গেলে তার পরে আমাদের ভালোর চিন্তা কোরো। কী বল ?” আনন্দময়ী ইহার পরে কোনাে উত্তর না করিয়া একটি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিলেন এবং মহিম পকেটের উবা ইহঁতে একটি পান বাহির করিয়া চিবাইতে চিবাইতে চলিয়া গেলেন। 8Wり ললিতা পরেশবাবুকে আসিয়া কহিল, “আমরা ব্রাহ্ম বলে কোনাে হিন্দু মেয়ে আমাদের কাছে পড়তে আসতে চায় না— তাই মনে করছি হিন্দুসমাজের কাউকে এর মধ্যে রাখলে কাজের সুবিধা হবে | কী বল বাবা ?” পরেশবাবু জিজ্ঞাসা করিলেন, “হিন্দুসমাজের কাউকে পাবে কোথায় ?” ললিতা খুব কোমর বাধিয়া আসিয়াছিল বটে, তবু বিনয়ের নাম করিতে হঠাৎ তাহার সংকোচ উপস্থিত হইল ; জোর করিয়া সংকোচ কাটাইয়া কহিল, “কেন, তা কি পাওয়া যাবে না ? এই-যে বিনয়বাবু আছেন— কিংবা—” এই কিংবাটানিতান্তই একটা ব্যৰ্থ প্রয়োগ, অব্যয়পদের অপব্যয় মাত্র। ওটা অসমাপ্তই রহিয়া গৈল । SSV