পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা Ꮤ2OᏔᎧ দীক্ষা নেবা ভান করে এই দুদিন আমাকে আর ব্ৰাহ্মসমাজ-সূদ্ধ লোককে ভুলিয়ে কাণ্ডটা কী করলে বলে দেখি ! ললিতার তুমি কী সর্বনাশ করতে বসেছি সে কথা একবার ভেবে দেখলে না ।” ললিতা কহিল, “বিনয়বাবুর দীক্ষায় তোমাদের ব্ৰাহ্মসমাজের সকলের তো সম্মতি নেই। কাগজে তো পড়ে দেখেছি। এমন দীক্ষা নেবার দরকার কী ?” বরদাসুন্দরী কহিলেন, “দীক্ষা না নিলে বিবাহ হবে কী করে ?” ললিতা কহিল, “কেন হবে না ?” বিনয় কহিল, “তা হতে পারে। যেটুকু বাধা আছে সে আমি দূর করে দেব।” বরদাসুন্দরীর মুখ দিয়া কিছুক্ষণ কথা বাহির হইল না। তাহার পরে রুদ্ধকণ্ঠে কহিলেন, “বিনয়, যাও, তুমি যাও ! এ বাড়িতে তুমি এসো না।” VO গোরা যে আজ আসিবে সুচরিতা তাহা নিশ্চয় জানিত। ভোরবেলা হইতে তাহার বুকের ভিতরটা কঁপিয়া উঠিতেছিল । সুচবিতার মনে গোরার আগমন-প্রত্যাশার আনন্দের সঙ্গে যেন একটা ভয় জড়িত ছিল । কেননা, গোরা তাহাকে যে দিকে টানিতেছিল এবং আশৈশব তাহার জীবন আপনার শিকড় ও সমস্ত ডালপালা লইয়া যে দিকে বাড়িয়া উঠিয়াছে দুয়ের মধ্যে পদে পদে সংগ্রাম তাহাকে তাই, কাল যখন মাসির ঘরে গোরা ঠাকুরকে প্ৰণাম করিল। তখন সুচরিতার মনে যেন ছুরি বিধিল । নাহয় গোরা প্ৰণামই করিল, নাহয় গোরার এইরূপই বিশ্বাস, এ কথা বলিয়া সে কোনােমতেই নিজের মনকে শান্ত করিতে পারিল না । গোরার আচরণে যখন সে এমন কিছু দেখে যাহার সঙ্গে তাহার ধর্মবিশ্বাসের মূলগত বিরোধ, তখন সুচরিতার মন ভয়ে কাপিতে থাকে। ঈশ্বর এ কী লড়াইয়ের মধ্যে তাহাকে ফেলিয়াছেন! ঠাকুরঘরে লইয়া গেলেন এবং আজও গােরা ঠাকুরকে প্ৰণাম করিল। সুচরিতার বসিবার ঘরে গােরা নামিয়া আসিবামাত্রই সুচরিতা তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল, “আপনি কি এই ঠাকুরকে ভক্তি করেন ?” গােরা একটু যেন অস্বাভাবিক জোরের সঙ্গে কহিল, "হাঁ, ভক্তি করি বৈকি।” শুনিয়া সুচরিতা মাথা হেঁট করিয়া চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। সুচরিতার সেই নম্র নীরব বেদনায় গোরা মনের মধ্যে একটা আঘাত পাইল । সে তাড়াতাড়ি কহিল, “দেখো, আমি তােমাকে সত্য কথা বলব। আমি ঠাকুরকে ভক্তি করি কি না ঠিক বলতে পারি নে, কিন্তু আমি আমার দেশের ভক্তিকে ভক্তি করি। এতকাল ধরে সমস্ত দেশের পূজা যেখানে পীেচেছে আমার কাছে সে পূজনীয়। আমি কোনােমতেই খৃস্টান মিশনারির মতাে সেখানে বিষদৃষ্টিপাত করতে পারি নে।” -حقا সুচরিতা মনে মনে কী চিন্তা করিতে করিতে গােরার মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। গােৱা কহিল, "আমার কথা ঠিকমত বােঝা তােমার পক্ষে খুব কঠিন সে আমি জানি। কেননা, সম্প্রদায়ের ভিতরে মানুষ হয়ে এসব জিনিসের প্রতি সহজ দৃষ্টিপাত করবার শক্তি তােমাদের চলে গিয়েছে। তুমি যখন তোমার মাসির ঘরে ঠাকুরকে দেখ তুমি কেবল পাথরকেই দেখ, আমি তােমার মাসির ভক্তিপূর্ণ করুণ হৃদয়কেই দেখি। সে দেখে আমি কি আর রাগ করতে পারি, অবজ্ঞা করতে পারি! তুমি কি মনে কর కిచ్తో পাথরের দেবতা !” ভক্তি করছি কিছুই বিচার করতে হবে না ?” রত্না কহিল, “ভক্তি কি করলেই হল ? কাকে 蜂 Y YA ) গােরা মনের মধ্যে একটু উত্তেজিত হইয়া কহিল, "অর্থাৎ তুমি মনে করছ একটা সীমাবদ্ধ পদার্থকে