পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রাচীন সাহিত্য ԳՀֆ শান্তির মধ্যেই সৌন্দর্যের পূর্ণতা, বিরোধের মধ্যে নহে। কালিদাস র্তাহার কাব্যের রসপ্রবাহকে সেই স্বৰ্গমর্তব্যাপী সর্বাঙ্গসম্পন্ন শান্তির মধ্যে মিলিত করিয়া তাহাকে মহান পরিণাম দান করিয়াছেন, তাহাকে অর্ধপথে “ন যযৌ ন তন্থেী করিয়া রাখিয়া দেন নাই। মাঝে তাহাকে যে একবার বিক্ষুব্ধ করিয়া দিয়াছেন সে কেবল এই পরিণত সৌন্দর্যের প্রশান্তিকে গাঢ়তর করিয়া দেখাইবার জন্য, ইহার স্থির শুভ্র মঙ্গলমূর্তিকে বিচিত্ৰবেশী উদভ্ৰান্ত সৌন্দর্যের তুলনায় উজ্জ্বল করিয়া তুলিবার জন্য। মহেশ্বর যখন সপ্তর্ষিদের মধ্যে পতিব্ৰতা অরুন্ধতীকে দেখিলেন তখন তিনি পত্নীর সৌন্দর্য যে কী তাহা দেখিতে পাইলেন। w.

  • তদৰ্শনাদভুৎ শম্ভোর

ভূয়ান দারার্থমােদরঃ । ক্রিয়াণাং খলু ধর্মাণাং সৎপত্ন্যো মূলকরণম ৷ র্তাহাকে দেখিয়া শাস্তুর দারগ্রহণের জন্য অত্যন্ত আদর জন্মিল। সৎপত্নীই সমস্ত ধৰ্মকার্যের মূলকরণ । ’ পতিব্ৰতার মুখচ্ছবিতে বিবাহিত রমণীর যে গীেরবশী অঙ্কিত আছে তাহা নিয়ত-আচরিত কল্যাণকর্মের স্থির সৌন্দৰ্য- শাস্তুর কল্পনানেত্রে সেই সৌন্দর্য যখন অরুন্ধতীর সীেমামূর্তি হইতে প্রতিফলিত হইয়া নববধূবেশিনী গীেরীর ললাট স্পর্শ করিল। তখন শৈলসূতা যে লাবণ্য লাভ করিলেন অকালবসন্তের সমস্ত পুষ্পসম্ভার তীহাকে সে সৌন্দর্য দান করিতে পারে নাই। বিবাহের দিনে গৌরী সা মঙ্গলমানবিশুদ্ধগাত্রী গৃহীতপত্যুদগমনীয়বস্ত্ৰা । প্রফুল্লকাশা বসুধেব রেজে ॥ " মঙ্গলমানে নির্মলগাত্রী হইয়া যখন পতিমিলনের উপযুক্ত বসন পরিধান করিলেন তখন বর্ষার জলাভিষেকের অবসানে কাশকুসুমে প্রফুল্ল বসুধার ন্যায় বিরাজ করিতে লাগিলেন । এই-যে মঙ্গলকান্তি নির্মল শোভা, ইহার মধ্যে কী শান্তি, কী শ্ৰী, কী সম্পূর্ণতা ! ইহার মধ্যে সমস্ত চেষ্টার অবসান, সমস্ত সজার শেষ পরিণতি । ইহার মধ্যে ইন্দ্রসভার কোনো প্ৰয়াস নাই, মদনের- কোনো মোহ নাই, বসন্তের কোনো আনুকূল্য নাই— এখন ইহা আপনার নির্মলতায় মঙ্গলতায় আপনি অক্ষুব্ধ, আপনি সম্পূর্ণ। জননীপদ আমাদের দেশের নারীর প্রধান পদ ; সস্তানের জন্ম আমাদের দেশে একটি পবিত্র মঙ্গলব্যাপার। সেইজন্য মনু রমণীদের সম্বন্ধে বলিয়াছেন— প্ৰজনাৰ্থং মহাভাগঃ পূজাহাঁ গৃহদ্দীপ্তয়ঃ। তাহারা সন্তানকে জন্ম দেন বলিয়া মহাভাগ, পূজনীয়া ও গৃহের দীপ্তিস্বরূপ। সমস্ত কুমারসম্ভব কাব্য কুমােরজন্মরূপ মহৎব্যাপারের উপযুক্ত ভূমিকা। মদন গোপনে শরনিক্ষেপ করিয়া ধৈর্যবধি ভাঙিয়া যে মিলন ঘটাইয়া থাকে তাহা পুত্রজন্মের যোগ্য নহে; সে মিলন পরস্পরকে কামনা করে, পুত্রকে কামনা করে না । এইজন্য কবি মদনকে ভস্মসাৎ করাইয়া গৌরীকে দিয়া তপশ্চরণ করাইয়াছেন । এইজন্য কবি প্রবৃত্তির চাঞ্চল্যস্থলে ধুবনিষ্ঠার একাগ্রতা, সৌন্দর্যমেহের স্থলে কল্যাণের কমনীয় দৃতি এবং বসন্তবিহ্বল বনভূমির স্থলে আনন্দনিমগ্ন বিশ্বলোককে দাঁড় করাইয়াছেন, তবে কুমারজন্মের সূচনা হইয়াছে। কুমারজন্ম ব্যাপারটা কী, তাহাই বুঝাইতে কবি মদনকে দেবরৈাষানলে আহুতি দিয়া অন্যথা রতিকে বিলাপ করাইয়াছেন । শকুন্তলাতেও প্রথম অঙ্কে প্ৰেয়সীর সহিত দুষ্মন্তের ব্যর্থ প্রণয় ও শেষ অঙ্কে ভরতজননীর সঙ্গে তাহার সার্থক মিলন কবি অঙ্কিত করিয়াছেন । প্রথম অঙ্ক চাঞ্চলে ঔজ্জ্বল্যে পূর্ণ ; তাহাতে উদবেলিযৌবনা ঋষিকন্যা, কৌতুকোচ্ছলিতা সখীদ্বয়,