পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8 রবীন্দ্র-রচনাবলী যাত্রিশালার দুয়ার খুলে আমায় বলে,— “দেখো, দেখো, একাগাড়ি কেমন চলে । আর দেখেছ বাছুরটি ঐ, আ মরে যাই, চিকন নধর দেহ, মায়ের চোখে কী সুগভীর স্নেহ । ঐ যেখানে দিঘির উচু পাড়ি,— শিশুগাছের তলাটিতে পাচিলষের ছোট্ট বাড়ি ঐ যে রেলের কাছে,— ইস্টেশনের বাবু থাকে ?—আহ ওরা কেমন সুখে আছে।” যাত্রীঘরে বিছানাটা দিলেম পেতে, বলে দিলেম, “বিহু এবার চুপটি করে ঘুমোও আরামেতে ।” প্ল্যাটফরমে চেয়ার টেনে পড়তে শুরু করে দিলেম ইংরেজি এক নভেল কিনে এনে । গেল কত মালের গাড়ি, গেল প্যাসেঞ্জার, ঘণ্টা তিনেক হয়ে গেল পার । এমন সময় যাত্রীঘরের স্বারের কাছে বাহির হয়ে বললে বিহু, “কথা একটা আছে ।” ঘরে ঢুকে দেখি কে এক হিন্দুস্থানি মেয়ে আমার মুখে চেয়ে সেলাম করে বাহির হয়ে রইল ধরে বারান্দাটার থাম । বিহু বললে, “রুকৃমিনী ওর নাম । ঐ যে হোথায় কুয়োর ধারে সারবাধা ঘরগুলি ঐপানে ওর বাসা আছে, স্বামী রেলের কুলি । তেরো-শ কোন সনে দেশে ওদের আকাল হল,—স্বামী-স্ত্রী দুইজনে পালিয়ে এল জমিদারের অত্যাচারে । সাত বিঘে ওর জমি ছিল কোন-এক গায়ে কী-এক নদীর ধারে—” বাধা দিয়ে আমি বললেম হেসে, রুকৃমিনীর এই জীবনচরিত শেষ না হতেই গাড়ি পড়বে এসে ।