পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

రివీసా রবীন্দ্র-রচনাবলী ফেলা উচিত ছিল। কিন্তু উপার্জনে আমাদের সুযোগ কম বলেই সঞ্চয়ে আমাদের অন্ধ আসক্তি। ভীতু আমরা ।” * "ওটা তোমাদের সহজবুদ্ধির উপদেশ। নিঃসম্বলতায় মেয়েদের ঐ নষ্ট হয় ।” “আমাদের ছোটো নীড়, সেখানে টুকিটাকি কিছু আমরা জমা করি। কিন্তু সে ত্তে কেবল বঁচবার প্রয়োজনে নয়, ভালোবাসার প্রয়োজনে । আমার যা-কিছু সমস্তই তোমার জন্তে, এ-কথা যদি বুঝিয়ে দিতে পারি তাহলে বাচি ।” “কিছুতেই বুঝব না ও-কথাটা । আজ পর্যন্ত মেয়েরা জুগিয়েছে সেবা, পুরুষরা জুগিয়েছে জীবিকা । তার বিপরীত ঘটলে মাথ৷ হেট হয়। যে-চাওয়া নিয়ে অসংকোচে তোমার কাছে হাত পাততে পারি তাকে ঠেকিয়ে দিয়ে তুমি পণের বাধ বেঁধেছ। সেদিন নারায়ণী ইস্কুলের খাতা নিয়ে হিসেব মেলাচ্ছিলে। বসে পড়লুম কাছে, ঝড়ের ঘা খেয়ে চিল যেমন ধুলায় পড়ে তেমনি । মার-খাওয়া মন নিয়ে এসেছিলুম। কর্তব্যের যেমনতেমন একটা ছাপমারা জিনিসে মেয়েদের নিষ্ঠা পাণ্ডার পায়ে তাদের অটল ভক্তির মতোই, ছাড়িয়ে নেওয়া অসম্ভব। মুখ তুলে চাইলে না। বসে বসে এক দৃষ্টিতে চেয়ে চেয়ে ইচ্ছা করছিলুম ওই সুকুমার আঙুলগুলির ডগা দিয়ে স্পর্শক্ষুধা পড়ুক ঝরে আমার । দেহে মনে । দরদ লাগল না তোমার কোনোখানেই ; কৃপণ, সেটুকুও দিতে পারলে না ! মনে মনে বললুম, আরও বেশি দাম দিতে হবে বুঝি। একদিন ফাট মাথা কাটা দেহ নিয়ে পড়ব মাটিতে, তখন ভেঙে-পড়া প্রাণটাকে নেবে তোমার কোলে তুলে ।” এলার চোখ ছলছলিয়ে এল, বললে, “আঃ, তোমার সঙ্গে পারি নে, অন্তু ! এটুকু না চেয়ে নিতে পারলে না ? কেড়ে নিলে না কেন আমার খাতা ? বুঝতে পার না, তোমারই সংকোচ আমাকে সংকুচিত করে । অস্তু, তোমার স্বভাব এক জায়গায় মেয়েদের মতো । ইচ্ছা থাকতে পারে প্রবল কিন্তু উদামভাবে তার দাবি প্রকাশ করতে তোমার রুচিতে ঠেকে।” 轟 “বংশগত ধারণা, ছেলেবেলা থেকে রক্তে মাংসে জড়ানো । বরাবর ভেবে এসেছি মেয়েদের দেহে মনে একটা শুচিতার মর্যাদা আছে ; তাদের দেহের সন্মানকে সশঙ্কচিত্তে রক্ষা করা আমাদের পূর্বপুরুষগত অভ্যাস । আমার কুষ্ঠিত মনকে একটুমাত্র প্রশ্রয় দেবার জন্তে তোমার মন যদি কখনো আর্দ্র হয় তবে আমার পক্ষ থেকে ভিক্ষে চাইবার অপেক্ষ ক'রো না । আমি শিখি নি তেমন করে চাইতে । ক্ষুধার সীমা নেই, তাই বলে পেটুক হতে পারব না, ওটা আমার ধাতে নেই। আমার কামনার কৌলীন্ত নষ্ট করতে পারি নে।” এলা অতীনের কাছে এসে ঘেঁষে বসল, তার মাথা বুকে টেনে নিয়ে তার উপরে