পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

అు রবীন্দ্র-রচনাবলী হইয়া আসে। ফলত সেই ভালোবাসা ব্যতিরেকে মাতার কর্ম সম্ভবপর হইতেই পারে না । তেমনি যদি বলি, অন্তরের মধ্যে ব্রহ্মের প্রকাশ হউক, তবে পাপসম্বন্ধে আর কোনো কথাই বলিতে হয় না। পাপের দিক হইতে যদি দেখি, তবে জটিলতার অন্ত নাই—তাহ ছেদন করিয়া, দাহন করিয়া, নিমূল করিয়া কেমন করিয়া যে বিনাশ করিতে হয়, তাহা ভাবিয়া শেষ করা যায় না - সেদিক হইতে দেখিতে গেলে ধর্মকে বিরাট বিভীষিকা করিয়া তুলিতে হয়— কিন্তু আনন্দময়ের দিক হইতে দেখিলে তৎক্ষণাং পাপ কুহেলিকার মতো অন্তহিত হয় । পাশ্চাত্য ধর্মশাস্ত্রে পাপ ও পাপ হইতে মুক্তি নিরতিশয় জটিল ও নিদারুণ, মানুষের বুদ্ধি তাহাকে উত্তরোত্তর গহন করিয়া তুলিয়াছে এবং সেই বিচিত্র পাপতত্বের দ্বারা ঈশ্বরকে খণ্ডিত করিয়া, দুর্গম করিয়া ধর্মকে দুর্বল করিয়াছে । আসতো মা সদগময় তমসো মা জ্যোতির্গময় মৃত্ত্যোৰ্মামৃতং গময় । অসৎ হইতে সত্যে লইয়। যাও, অন্ধকার হইতে জ্যোতিতে লইয়া যাও, মৃত্যু হইতে অমৃতে লইয়৷ বাও । আমাদের অভাব কেবল সত্যের অভাব, আলোকের অভাব, অমৃতের অভাব - আমাদের জীবনের সমস্ত দুঃখ পাপ নিরানন্দ কেবল এইজন্যই। সত্যের, জ্যোতির, অমৃতের ঐশ্বৰ্ষ যিনি কিছু পাইয়াছেন, তিনিই জানেন, ইহাতে আমাদের জীবনের সমস্ত অভাবের একেবারে মূলচ্ছেদ করিয়া দেয় । যে-সকল ব্যাঘাতে র্তাহার প্রকাশকে আমাদের নিকট হইতে আচ্ছন্ন করিয়া রাখে, তাহাই বিচিত্ররূপ ধারণ করিয়া আমাদিগকে নানা দুঃখ এবং অকৃতার্থতার মধ্যে অবতীর্ণ করিয়া দেয় । সেইজন্যই আমাদের মন অসত্য, অন্ধকার ও বিনাশের আবরণ হইতে রক্ষা চাহে। যখন সে বলে আমার দুঃখ দূর করে, তখন সে শেষ পর্যন্ত না বুঝিলেও এই কথাই বলে – যখন সে বলে আমার দৈন্যমোচন করে, তখন সে যথার্থ কী চাহিতেছে, তাহা না জানিলেও এই কথাই বলে । যখন সে বলে আমাকে পাপ হইতে রক্ষা করে, তখনও এই কথা । সে না বুঝিয়াও বলে - জাবিরাষ্ট্ৰীয়ঁ এধি । হে স্বপ্রকাশ, আমার নিকট প্রকাশিত হও । আমরা ধ্যানযোগে আমাদের অন্তরবাহিরকে যেমন বিশ্বেশ্বরের দ্বারাই বিকীর্ণ দেখিতে চেষ্টা করিব, তেমনি আমরা প্রার্থনা করিব যে, যে সত্য যে জ্যোতি যে অমৃতের মধ্যে আমরা নিত্যই রহিয়াছি, তাহাকে সচেতনভাবে জানিবার যাহা-কিছু বাধা, সেই অসত্য সেই অন্ধকার সেই মৃত্যু যেন দূর হইয়া যায়। যাহা নাই তাহ চাই না, আমাদের যাহা আছে তাহাকেই পাইব, ইহাই আমাদের প্রার্থনার বিষয়—বাহ দূরে তাহাকে