পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

రీనా8 রবীন্দ্র-রচনাবলী আপন শক্তির দ্বারা তাহাকে আপন অন্ত্র নির্মাণ করিতে হইয়াছে—কোমল ত্বক এবং দুর্বল শরীর লইয়া মানুষ যে আজ সমস্ত প্রাণিসমাজের মধ্যে আপনাকে জয়ী করিয়াছে, ইহা মানবশক্তির গৌরব । মানুষকে দুঃখ দিয়া ঈশ্বর মানুষকে সার্থক করিয়াছেন,— তাহাকে নিজের পূর্ণশক্তি অনুভব করিবার অধিকারী করিয়াছেন। মানুষের এই শক্তি যদি নিজের প্রয়োজন সাধনের সীমার মধ্যেই সার্থকতা লাভ করিত, তাহা হইলেও আমাদের পক্ষে যথেষ্ট হইত, তাহা হইলেও আমরা জগতের সমস্ত জীবের উপরে আপনার শ্রেষ্ঠত্ব স্থাপন করিতে পারিতাম । কিন্তু আমাদের শক্তির মধ্যে কোন মহাসমুদ্র হইতে এ কী জোয়ার আসিয়াছে—সে আমাদের সমস্ত অভাবের কুল ছাপাইয়া সমস্ত প্রয়োজনকে লভযন করিয়া অহৰ্নিশি অক্লান্ত উদ্যমের সহিত এ কোন অসীমের রাজ্যে কোন অনির্বচনীয় আনন্দের অভিমুখে ধাবমান হইয়াছে। যাহাকে জানিবার জন্য সমস্ত পরিত্যাগ করিতেছে, তাহাকে জানিবার ইহার কী প্রয়োজন । যাহার নিকট আত্মসমর্পণ করিবার জন্য ইহার সমস্ত অন্তরাত্মা ব্যাকুল হইয়া উঠিয়াছে তাহার সহিত ইহার আবশ্বকের সম্বন্ধ কোথায় । যাহার কর্ম করিবার জন্য এ আপনার আরাম, স্বার্থ, এমন কি, প্রাণকে পর্যন্ত তুচ্ছ করিতেছে, তাহার সঙ্গে ইহার দেনাপাওনার হিসাব লেখা থাকিতেছে কই । আশ্চর্য । ইহাই আশ্চর্য । আনন্দ । ইহাই আনন্দ । যেখানটা মানুষের সমস্ত আবশ্বকসীমার বাহিরে চলিয়া গেছে, সেইখানেই মাহুষের গভীরতম সর্বোচ্চতম শক্তি সর্বদাই আপনাকে স্বাধীন আনন্দে উধাও করিয়া দিবার চেষ্টা করিতেছে। জগতের আর কোথাও ইহার কোনো তুলনা দেখি না। মহন্তশক্তির এই প্রয়োজনাতীত পরম গৌরব অদ্যকার উংসবে আনন্দসংগীতে ধ্বনিত হইতেছে। এই শক্তি অভাবের উপরে জয়ী, ভয়শোকের উপরে জয়ী, মৃত্যুর উপরে জয়ী। আজ অতীত-ভবিষ্যতের সুমহান মানবলোকের দিকে দৃষ্টিস্থাপনপূর্বক মানবাত্মার মধ্যে এই অভ্ৰভেদী চিরন্তনশক্তিকে প্রত্যক্ষ করিয়া আপনাকে সার্থক করিব । একদা কত-সহস্ৰ-বৎসর পূর্বে মানুষ এই কথা বলিয়াছে— বেদাহমেতং পুরুষং মহাস্তম্ আদিত্যবর্ণং তমস: পরস্তাৎ । আমি সেই মহান পুরুষকে জানিয়াছি, ৰিনি জ্যোতিমৰ্ব, ৰিনি অন্ধকারের পরপরবর্তী। এই প্রত্যক্ষ পৃথিবীতে ইহাই আমাদের জানা আবস্তক যে, কোথায় আমাদের খাদ্য, কোথায় আমাদের খাদক, কোথায় আমাদের আরাম, কোথায় আমাদের ব্যাঘাত— কিন্তু এই সমস্ত জানাকে বহুদূর পশ্চাতে ফেলিয়া মাস্থ্য চিররহস্ত অন্ধকারের এ কোন পরপারে, এ কোন জ্যোতিলোকে কিসের প্রত্যাশায় চলিয়া গেছে। মানুষ এই যে তাহার সমস্ত প্রত্যক্ষ প্রয়োজনের অভ্যস্তরেও সেই তিমিরাতীত জ্যোতির্ময় মহান