পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪২৬ রবীন্দ্র-রচনাবলী মনে কর, তবে সৈনিকরপে অধীন হইতে হইবে, বণিকরূপে অধীন হইতে হইবে। ইংলণ্ডে ষে কত লক্ষ সৈনিক আছে, তাহারা কি স্বাধীন ? মচুন্যত্বকে যে তাহার মানুষমার ফলে পরিণত করিয়াছে, তাহার সজীব বন্দুকমাত্র। কত লক্ষ মজুর খনির অন্ধ রসাতলে, কারখানার অগ্নিকুণ্ডে থাকিয়া ইলেণ্ডের রাজ্যষ্ট্রর পায়ের তলায় বুকের রক্ত দিয়া আলতা পরাইতেছে। তাহারা কি স্বাধীন ? তাহার তো নিজ ব কলের সজীব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। যুরোপে স্বাধীনতার ফলভোগ করিতেছে কয়জন ? তবে স্বাধীনত কাহাকে বলে ? individualism অৰ্থাৎ ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য রোপের সাধনার বিষয় হইতে পারে, কিন্তু ব্যক্তির পরতন্ত্রতা এত বেশি কি অন্যত্র দেখা গিয়াছে ? ইহার উত্তরে একটা স্বতোবিরোধী কথা বলিতে হয়। পরতন্ত্রতার ভিতর দিয়াই স্বাতন্ত্র্যে যাইবার পথ। বাণিজ্যে তুমি যতবড়ো লাভের টাকা আনিতে চাও, ততবড়ে মূলধনের টাকা ফেলিতে হইবে। টাকা কিছুই খাটিতেছে না, কেবলই ' লাভ করিতেছে, ইহা হয় না। স্বাতন্ত্র্য তেমনি সুদের মতে, বিপুল পরতন্ত্রত খাটাইয়া তবে সেইটুকু লাভ হইতেছে—আগাগোড়া সমস্তটাই লাভ, আগাগোড়া সমস্তই স্বাধীনতা, এ কখনো সম্ভবপর নহে । আমাদের দেশেরও সাধনার বিষয় ছিল Individualism—ব্যক্তি-স্বাতন্ত্র্য। কিন্তু সে তো কোনো ছোটোখাটে স্বাতন্ত্র্য নয়। সেই স্বাতন্ত্র্যের আদর্শ একেবারে মুক্তিতে গিয়া ঠেকিয়াছে। ভারতবর্ষ প্রত্যেক লোককে জীবনের প্রতিদিনের ভিতর দিয়া, সমাজের প্রত্যেক সম্বন্ধের ভিতর দিয়া সেই মুক্তির অধিকার দিবার চেষ্টা করিয়াছে। যুরোপে যেমন কঠোর পরতন্ত্রতার ভিতর দিয়া স্বাতন্ত্র্য বিকাশ পাইতেছে, আমাদের দেশেও তেমনি নিয়মসংযমের নিবিড় বন্ধনের ভিতর দিয়াই মুক্তির উপায় নির্দিষ্ট । হইয়াছে। সেই মুক্তির পরিণামকে লক্ষ্য হইতে বাদ দিয়া যদি কেবল নিয়মসংযমকেই একান্ত করিয়া দেখি, তবে বলিতেই হয়, আমাদের দেশে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের । খর্বতা বড়ো বেশি। 陶 আসল কথা, কোনো দেশের যখন দুৰ্গতির দিন আসে, তখন সে মুখ্য জিনিসটাকে হারায়, অথচ গৌণটা জঞ্জাল হইয়া জায়গা জুড়িয়া বসে। তখন পাখি উড়িয়া পালায়, খাচী পড়িয়া থাকে। আমাদের দেশেও তাই ঘটিয়াছে । আমরা এখনও নানাবিধ বাধাবাধি মানিয়া চলি, অথচ তাহার পরিণামের প্রতি লক্ষ্য নাই। মুক্তির সাধন আমাদের মনের মধ্যে আমাদের ইচ্ছার মধ্যে নাই, অথচ তাহার বন্ধনগুলি আমরা আপাদমস্তক বহন করিয়া বেড়াইতেছি। ইহাতে আমাদের দেশের মে মুক্তির আশে, তাহা তো নষ্ট হইতেছেই; যুরোপের ষে স্বাধীনতার আদর্শ, তাহার পথেও পদে