পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8१७ • , রবীন্দ্র-রচনাবলী নিয়ে বলতে পারি এই আমার চিরজীবনের সম্বল লাভ হয়ে গেল—আর কিছুই দরকার নেই! সেইজন্তেই তো স্বামীর ত্যক্ত সমস্ত বিষয় সম্পত্তি ঠেলে ফেলে দিয়ে মৈত্রেয়ী বলে উঠেছিলেন, এসব নিয়ে আমি কী করব। আমি যে অমৃতকে চাই । আচ্ছা, বেশ, উপকরণ তো অমৃত নয়, তাহলে অমৃত কী ! আমরা জানি অমৃত কী। পৃথিবীতে একেবারে যে তার স্বাদ পাই নি তা নয়। যদি না পেতুম তাহলে তার জন্যে আমাদের কান্না উঠত না । আমরা সংসারের সমস্ত বিষয়ের মধ্যে কেবলই তাকে খুজে বেড়াচ্ছি, তার কারণ ক্ষণে-ক্ষণে সে আমাদের স্পর্শ করে যায় । মৃত্যুর মধ্যে এই অমৃতের স্পর্শ আমরা কোনখানে পাই ? যেখানে আমাদের প্রেম আছে। এই প্রেমেই আমরা অনস্তের স্বাদ পাই । প্রেমই সীমার মধ্যে অসীমতার ছায়া ফেলে পুরাতনকে নবীন করে রাখে, মৃত্যুকে কিছুতেই স্বীকার করে না । সংসারের বিচিত্র বিষয়ের মধ্যে এই যে প্রেমের আভাস দেখতে পেয়ে আমরা মৃত্যুর অতীত পরম পদার্থের পরিচয় পাই, তার স্বরূপ যে প্রেমস্বরূপ তা বুঝতে পারি— এই প্রেমকেই যখন পরিপূর্ণরূপে পাবার জন্তে আমাদের অন্তরাত্মার সত্য আকাঙ্ক্ষা আবিষ্কার করি তখন আমরা সমস্ত উপকরণকে অনায়াসেই ঠেলে দিয়ে বলতে পারি “যেনাহং নামৃত তাম্ কিমহং তেন কুর্ষাম।” এই যে বলা, এটি যখন রমণীর মুখের থেকে উঠেছে তখন কী স্পষ্ট, কী সত্য, কী মধুর হয়েই উঠেছে। সমস্ত চিন্তা সমস্ত যুক্তি পরিহার করে কী অনায়াসেই এটি ধ্বনিত হয়ে উঠেছে। ওগো, আমি ঘর-দুয়ার কিছুই চাই নে আমি প্রেম চাই— এ কী কাল্লা । মৈত্রেয়ীর সেই সরল কাল্পটি যে প্রার্থনারূপ ধারণ করে জাগ্রত হয়ে উঠেছিল তেমন আশ্চর্ষ পরিপূর্ণ প্রার্থনা কি জগতে আর কোথাও কখনো শোনা গিয়েছে ? সমস্ত মানবহৃদয়ের একান্ত প্রার্থনাটি এই রমণীর ব্যাকুলকণ্ঠে চিরন্তনকালের জন্তে বাণীলাভ করেছে। এই প্রার্থনাই আমাদের প্রত্যেকের একমাত্র প্রার্থনা, এবং এই প্রার্থনাই বিশ্বমানবের বিরাট ইতিহাসে যুগে যুগান্তরে উচ্চারিত হয়ে আসছে। । -- যেনাহং নামৃত তাম্ কিমহং তেন কুর্ষাম এই কথাটি সবেগে বলেই কি সেই ব্ৰহ্মবাদিনী তখনই জোড়হাতে উঠে দাড়ালেন এবং তার অশ্রশ্লাবিত মুখটি আকাশের দিকে স্কুলে বলে উঠলেন—অসতে মা সদগময়, তমসে মা জ্যোতির্গময়, মৃতোর্ষামৃতংগমঙ্গ—জাবিরাবীর্ম এধি—কন্দ্র যত্তে দক্ষিণংমুখং তেন মাং পাহি নিত্যম্ ?