পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8& রবীন্দ্র-রচনাবলী মনে হল আমার ঘরের সকাল যেন মরেছে বুক ফেটে । ভোরবেলা তার বিষম গণ্ডগোলে ঘুম-ভাঙনের সাগরমাঝে আর কি তুফান তোলে । ছুটোছুটির উপদ্রবে ব্যস্ত হত সবে, হা হা করে ছুটে আসত “আরে আরে করিস কী তুই” বলে ; ভূমিকম্পে গৃহস্থালি উঠত যেন টলে । আজ যত তার দস্থাপনা, যা-কিছু হাকডাক চাক-ভরা মৌমাছির মতো উড়ে গেছে শূন্ত করে চাক । আমার এ সংসারে অত্যাচারের সুধা-উৎস বন্ধ হয়ে গেল একেবারে ; তাই এ ঘরের প্রাণ লোটায় ম্রিয়মাণ জল-পালানো দিঘির পদ্ম যেন । পাট-পালঙ্ক শূন্তে চেয়ে শুধায় শুধু, “কেন, নাই সে কেন ।” সবাই তারে দুষ্ট বলত, ধরত আমার দোষ, মনে করত শাসন বিনা বড়ো হলে ঘটাবে আপসোস । সমুদ্র-ঢেউ যেমন বঁধন টুটে ফেনিয়ে গড়িয়ে গর্জে ছুটে ফিরে ফিরে ফুলে ফুলে কুলে কুলে দুলে দুলে পড়ে লুটে লুটে ধরার বক্ষতলে, দুরস্ত তার দুষ্ট মিটি তেমনি বিষম বলে দিনের মধ্যে সহস্রবার করে বাপের বক্ষ দিত অসীম চঞ্চলতায় ভরে । বয়সের এই পর্দা-ঘেরা শাস্ত ঘরে আমার মধ্যে একটি সে কোন চির-বালক লুকিয়ে পেলা করে ; বিজুর হাতে পেলে নাড়া সেই যে দিত সাড়া । সমান-বয়স ছিল আমার কোনখানে তার সনে, সেইখানে তার সাথি ছিলেম সকল প্রাণে মনে ।