পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পলাতক রাখাল ছেলের সঙ্গে বসে বটের ছায়ে ছেলেবেলায় বঁাশের বঁাশি বাজিয়েছিলেম গায়ে । সেই বাশিটির টান ছুটির দিনে হঠাৎ কেমন আকুল করল প্ৰাণ । আমি ছাড়া সকল ছেলেই গেছে যে যার দেশে, একলা থাকি “মেস”-এ। সকালসাঝে মাঝে মাঝে বাজাই ঘরের কোণে মেঠো গানের মুর যা ছিল মনে । ঐ যে ওদের কালো মেয়ে নন্দরানী যেমনতরে ওর ভাঙা ঐ জানলাখানি, যেখানে ওর কালো চোখের তারা কালো আকাশতলে দিশহারা ; যেখানে ওর এলোচুলের স্তরে স্তরে বাতাস এসে করত খেলা আলসভরে ; যেখানে ওর গভীর মনের নীরব কথাখানি আপন দোসর খুজে পেত আলোর নীরব বাণী ; তেমনি আমার বঁাশের বঁশি আপনভোলা, চারদিকে মোর চাপা দেয়াল, ঐ বাশিটি আমার জানলা খোলা । ঐখানেতেই গুটিকয়েক তান ঐ মেয়েটির সঙ্গে আমার ঘুচিয়ে দিত অসীম ব্যবধান। এ সংসারে অচেনাদের ছায়ার মতন আনাগোনা কেবল বঁাশির মুরের দেশে দুই অজানার রইল জানাশোনা । যে-কথাটা কান্না হয়ে বোবার মতন ঘুরে বেড়ায় বুকে উঠল ফুটে বাশির মুখে । বাশির ধারেই একটু আলো, একটুখানি হাওয়া, যে-পাওয়াটি যায় না দেখা স্পৰ্শ-অতীত একটুকু সেই-পাওয়া । ()