পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

छिन गई SGA ভাষায় শোনবার সম্ভাবনা ছিল না, তাই এ তথ্যটা আমার চেতনার বাইরে পড়ে ছিল। বিলেতে গিয়ে যেমন আবিষ্কার করেছি। সাধারণের তুলনায় আমার বুদ্ধি বেশি আছে, তেমনি ধরা পড়েছিল আমাকে দেখতে ভালো। আমার এদেশী পাঠকদের মনে ঈর্ষা জন্মাবার মতো অনেক কাহিনীর ভূমিকা দেখা দিয়েছিল, কিন্তু হালকা করে বলছি, আমি তাদের নিয়ে ভাবের কুহিকে মনকে জমাট বাধতে দিইনি। হয়তো আমার স্বভাবটা কড়া, পশ্চিমবঙ্গের শৌখিনদের মতো ভাবালুতায় আৰ্যচিত্ত নই ; নিজেকে পাথরের সিন্ধুক করে তার মধ্যে আমার সংকল্পকে ধরে রেখেছিলুম। মেয়েদের নিয়ে রসের পালা শুরু করে তার পরে সময় বুঝে খেলা ভঙ্গ করা ; সেও ছিল আমার প্রকৃতিবিরুদ্ধ, আমি নিশ্চয় জনতুম, যে জেদ নিয়ে আমি আমার ব্ৰতের আশ্রয়ে বেঁচে আছি, এক-পা ফাঁসকালে সেই জেদ নিয়েই আমার ভাঙা ব্ৰতের তলায় পিষে মরতে হবে। আমার পক্ষে এর মাঝখানে কোনো ফকির পথ নেই। তা ছাড়া আমি জন্মপাড়াষ্ট্ৰোয়ে, মেয়েদের সম্বন্ধে আমার সেকেলে সংকোচ ঘুচিতে চায় না। তাই মেয়েদের ভালোবাসা নিয়ে যারা অহংকারের বিষয় করে, আমি তাদের অবজ্ঞা করি । বিদেশী ভালো ডিগ্রিই পেয়েছিলুম। সেটা এখানে সরকারি কাজে লাগবে না জেনে ছোটনাগপুরে চন্দ্ৰবংশীয় এক রাজার- মনে করা যাক, চণ্ডবীর সিংহের দরবারে কাজ নিয়েছিলুম। সৌভাগ্যক্রমে ষ্ঠার ছেলে দেবিকাপ্রসাদ কিছুদিন কেমব্রিজে পড়াশুনা করেছিলেন। দৈবাৎ উষ্ঠার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল জুরিকে, সেখানে আমার খ্যাতি তার কানে গিয়েছিল। তঁকে বুঝিয়েছিলুম। আমার প্ল্যান । শুনে খুব উৎসাহিত হয়ে তাদের স্টেটে আমাকে জিয়লজিকাল সর্ভের কাজে লাগিয়ে দিলেন। এমন কােজ ইংরেজকে না দেওয়াতে উপরিস্তরের বায়ুমণ্ডল বিক্ষুব্ধ হয়েছিল। কিন্তু দেবিকাপ্রসাদ ছিলেন বঁঝালো লোক । বুড়ে রাজার মন টলমল করা সত্বেও টিকে গেলুম। এখানে আসবার আগে মা আমাকে বললেন, “বাবা, ভালো কাজ পেয়েছ, এইবার একটি বিয়ে করো, আমার অনেক দিনের সাধ মিটুক ”আমি বললুম, “অৰ্থাৎ কাজ মাটি করো। আমার যে কাজ তার সঙ্গে বিয়ের তাল মিলবে না৷ ” দৃঢ় সংকল্প, ব্যর্থ হল মায়ের অনুনয়। যত্নতন্ত্র সমন্ত বেঁধে-চ্ছেদে নিয়ে চলে এলুম জঙ্গলে । এইবার আমার দেশব্যাপী কীৰ্তিসম্ভাবনার ভাবী দিগন্তে হঠাৎ যে একটুকু গল্প ফুটে উঠল, তাতে আলেয়ার চেহারাও আছে, আরো আছে শুকতারার । নীচের পাথরকে প্রশ্ন করে মাটির সন্ধানে বেড়াচ্ছিলুম বনে বনে । পলাশফুলের রাঙা রঙের মাতলামিতে তখন বিভোর আকাশ । শালগাছে ধরেছে মঞ্জরী, মীেমাছি ঘুরে বেড়াচ্ছে বঁাকে বঁাকে । ব্যাবসাদাররা জো সংগ্রহে লেগে গিয়েছে। কুলের পাতা থেকে জমা করছে তসরের রেশমের গুটি । সঁওতালরা কুড়োচ্ছে মহুয়া ফল। বিরুঝের শব্দে হালকানাচের ওড়না ঘুরিয়ে চলেছিল একটি ছিপছিপে নদী, আমি তার নাম দিয়েছিলুম তনিকা । এটা কারখানাঘর নয়, কলেজ ক্লাস নয়, এ সেই সুখতন্দ্ৰায় আবিল প্রদোষের রাজ্য যেখানে একলা মন পেলে প্রকৃতি-মায়াবিনী তার উপরেও রংরেজিনীর কাজ করে- যেমন সে করে সূর্যান্তের পটে। মনটাতে একটু আবেশের ঘোর লেগেছিল। মন্থর হয়ে এসেছিল কাজের চাল, নিজের উপরে বিরক্ত হয়েছিলুম ; ভিতর থেকে জোর লাগাচ্ছিলুম দাড়ে। মনে ভাবছিলুম, ট্রপিকাল আবহাওয়ার মাকড়সার জালে জড়িয়ে পড়লুম বুঝি। শয়তানি ট্রপিক্স এ দেশে জন্মকাল থেকে হাতপাখার ইণ্ডিয়ায় হারের মন্ত্ৰ চালাচ্ছে আমাদের রক্তে- এড়াতে হবে তার বেদসিক্ত জাদু। বেলা পড়ে এল। এক জায়গায় মাঝখানে চর ফেলে দুভাগে চলে গিয়েছে নদী। সেই বালুর বীপে তত্ত্ব হয়ে বসে আছে বকের দল। দিনাবসানে রোজ এই দৃশ্যটি ইঙ্গিত করত। আমার কাজের বাক ফিরিয়ে দিতে, বুলিতে মাটি-পাথরের নমুনা নিয়ে ফিরে চলছিলুম আমার রাংলোঘরে, সেখানে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করতে যাব । অপরায়ু আর সন্ধ্যার মাঝখানে দিনের যে একটা পোড়ো জমির মতো ফালতো অংশ আছে, একলা মানুষের পক্ষে সেইটে কাটিয়ে চলা শক্ত। বিশেষত নির্জন বনে । তাই আমি ঐ সময়টা রেখেছি পরখ করার কাজে । ডাইনামোতে বিজলি বাতি জ্বালাই, কেমিক্যাল নিয়ে মাইক্রসকোপ নিয়ে নিক্তি নিয়ে বসি। এক-একদিন রাত দুপুর পেরিয়ে যায়। আজ আমার