পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লিপিকা S)Գ Պ বৃহস্পতি । আপনার জন্মাবার উপযুক্ত বংশ পৃথিবীতে এখন কোথায় । কীৰ্তিকেয়। বৈশ্য এখন রাজা, ক্ষত্রিয় এখন বৈশ্যের সেবায় লড়াই করছে, ব্ৰাহ্মণ এখন বৈশ্যের Wp | ইন্দ্র। কোথায় জন্মাব সে তো আমার ইচ্ছার উপরে নেই, যেখানে আমাকে আকর্ষণ করে নোবে সেইখানেই আমার স্থান হবে । বৃহস্পতি । আপনি যে ইন্দ্র সেই স্মৃতি কেমন করেইন্দ্র। সেই স্মৃতি লোপ করে দিয়ে তবেই আমি মর্তবাসী হয়ে মর্তের সাধনা করতে পারব। কীর্তিকেয়। এতদিন পৃথিবীর অস্তিত্ব ভুলেই ছিলুম, আজ। আপনার কথায় হঠাৎ মন ব্যাকুল হয়ে উঠল। সেই তখী শ্যামা ধারণী সূর্যোদয়-সূৰ্যান্তের পথ ধরে স্বর্গের দিকে কী উৎসুক দৃষ্টিতেই তাকিয়ে আছে । সেই ভীরুর ভয় ভাঙিয়ে দিতে কী আনন্দ । সেই ব্যথিতার মনে আশার সঞ্চার করতে কী গৌরব । সেই চন্দ্ৰকান্তমণিকিরীটিশী নীলাম্বরী সুন্দরী কেমন করে ভুলে গিয়েছে যে সে রানী। তাকে আবার মনে করিয়ে দিতে হবে যে, সে দেবতার সাধনার ধন, সে স্বর্গের চিরদায়িতা । ইন্দ্র । আমি সেখানে গিয়ে তার দক্ষিণসমীরণে এই কথাটি রেখে আসতে চাই যে, তারই বিরহে স্বর্গের অমৃতে স্বাদ চলে গেছে এবং নন্দনের পারিজাত স্নান; তাকে বেষ্টন ক'রে ধীরে যে সমুদ্র রয়েছে সেই তো স্বর্গের অশ্রু, তারই বিচ্ছেদক্ৰন্দনকেই তো সে মর্তে অনন্ত করে রেখেছে। কার্তিকেয়। দেবরাজ, যদি অনুমতি করেন তা হলে আমরাও পৃথিবীতে যাই । বৃহস্পতি । সেখানে মৃত্যুর অবগুণ্ঠনের ভিতর দিয়ে অমৃতের জ্যোতিকে একবার দেখে আসি । কীর্তিকেয়। বৈকুণ্ঠের লক্ষ্মী ঠার মাটির ঘরটিতে যে নিত্যনুতন লীলা বিস্তার করেছেন আমরা তার রস থেকে কেন বঞ্চিত হব। আমি যে বুঝতে পারছি, আমাকে পৃথিবীর দরকার আছে ; আমি নেই বলেই তো সেখানে মানুষ স্বার্থের জন্যে নির্লজ্জ হয়ে যুদ্ধ করছে, ধর্মের জন্যে নয়। বৃহস্পতি । আর, আমি নেই বলেই তো মানুষ কেবল ব্যবহারের জন্যে জ্ঞানের সাধনা করছে, মুক্তির জন্যে নয়। ইন্দ্র । তোমরা সেখানে যাবে, আমি তো তারই উপায় করতে চলেছি ; সময় হলেই তোমরা পরিণত ফলের মতো আপন মাধুর্যভারে সহজেই মর্তে স্বলিত হয়ে পড়বে। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করা । কার্তিকেয়। কখন টের পাব, মহেন্দ্র, যে, আপনার সাধনা সার্থক হল । বৃহস্পতি । সে কি আর চাপা থাকবে । যখন জয়শঙ্খধ্বনিতে স্বৰ্গলোক কেঁপে উঠবে তখনই বুঝব। R---- ইন্দ্র । না দেবগুরু, জয়ধ্বনি উঠবে না। স্বর্গের চোখে যখন করুণার অশ্রু গলে পড়বে তখনই জানবেন, পৃথিবীতে আমার জন্মলাভ সফল হল । কার্তিকেয় । ততদিন বোধ হয় জানতে পারব না, সেখানে ধুলার আবরণে আপনি কোথায় লুকিয়ে अitछन् ! বৃহস্পতি । পৃথিবীর রসই তো হল এই লুকোচুরিতে। ঐশ্বর্য সেখানে দরিদ্রবেশে দেখা দেয়, শক্তি সেখানে অক্ষমের কোলে মানুষ হয়, বীর্য সেখানে পরাভাবের মাটির তলায় আপন জয়ন্তম্ভের ভিত্তি খনন করে। সম্ভব সেখানে অসম্ভবের মধ্যে বাসা করে থাকে। যা দেখা দেয়, পৃথিবীতে তাকে মানতে গিয়েই ভুল হয় ; যা না দেখা দেয় তারই উপর চিরদিন ভরসা রাখতে হবে । কীর্তিকেয়। কিন্তু সুররাজ, আপনার ললাটের চিরোজিল জ্যোতি আজ স্নান হল কেন । বৃহস্পতি । মর্তে যে যাবেন তার গৌরবের প্রভা আজ দীপ্যমান হয়ে উঠক । ইন্দ্র। দেবগুরু, জন্ধের যে বেদনা সেই বেদনা এখনই আমাকে পীড়িত করছে । আজ আমি দুঃখেরই অভিসারে চলেছি, তারই আহবানে আমার মনকে টেনেছে। শিবের সঙ্গে সতীর যেমন বিচ্ছেদ হয়েছিল, স্বর্গের আনন্দের সঙ্গে পৃথিবীর ব্যথার তেমনি বিচ্ছেদ হয়েছে ; সেই বিচ্ছেদের দুঃখ এত দিন