পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

s 886 তেঁতুলের ডালে বসে অস্থির হয়ে প্রশ্ন করত, কাকা ? আমি যেমন বলতুম কিছু না, অমনি দেখতে দেখতে সব যেত মিলিয়ে- তুমি জেগে উঠতে তোমার বিছানায় । পুপূদিদি একটুখানি হেসে বললে, এই-যে আমার ছেলেমানুষের কাহিনীটি শোনা গেল-এটি এত ইনিয়ে-বিনিয়ে বলে তোমার কী আনন্দ হল। আমার হিংসুকে স্বভাব ছিল, এইটে জানাবার জন্যে তোমার এতই উৎসাহ ! আর, আমাদের বিলিতিআমড়া গাছের পাকা আমড়াগুলো পেড়ে নিয়ে সুকুমারদকে লুকিয়ে দিয়ে আসতুম, আমড়া সে ভালোবাসত বলে ; চুরির অপবাদটা হত। আমার, আর ভোগ করত সে- সে কথাটা চেপে গেছ । সুকুমারদা নাহয় অঙ্কই ভালো কষত, কিন্তু আমার বেশ মনে আছে একদিন সে "অবধান কথাটার মানে ভেবে পাচ্ছিল না, আমি ফ্লেটে লিখে আড় করে ধরে তাকে দেখিয়ে দিয়েছিলুম- এ কথাগুলো বুঝি তোমার গল্পের মধ্যে পড়ে না ? আমি বললুম, আমার খুশির কারণ এ নয় যে, মনের জ্বালায় তুমি সুকুমারদার যৌবরাজ্য মানতে চাও নি। তার উপরে তোমার হিংসের কারণ ছিল আমার উপর তোমার অনুরাগবশত- আমার আনন্দের স্মৃতি রয়েছে। ঐখানেই । আচ্ছা, তোমার অহংকার নিয়ে তুমি থাকে। একটা কথা তোমাকে জিগেস করি, সেই- যে তোমার নামহারা বানানো মানুষটি যাকে বলতে সে, তার হল কী । আমি বললেম, তার বয়স বেড়ে গেছে । weig (No সে এখন চিন্তা করে, মাথায় তার দুঃসমস্যার ভিমরুলে চাক বেঁধেছে, তর্কে তার সঙ্গে পারবার জো G দেখছি আমারই প্যারাল্যাল লাইনেই চলেছে । তা হতে পারে, কিন্তু গল্পের এলেকা ছাড়িয়ে গেছে। থেকে থেকে সে হাত মুঠো করে বেঁকে বেঁকে বলে উঠছে, শক্ত হতে হবে । বালুক-না। শক্ত ছাদেই গল্প জামুক-না। চুমুক দিয়ে খাওয়া নেই হল, চিবিয়ে খাওয়া চলবে তো । হয়তো আমার পছন্দ হবে । পাছে আকেল দাতের অভাবে তাকে কায়দা করতে না পাের, এই ভয়ে অনেকদিন তাকে চুপ করিয়ে রেখেছি । Y ইস ! তোমার ভাবনা দেখে হাসি পায় । তুমি ঠাউরে রেখেছি, আমার যথেষ্ট বয়স হয় নি । সর্বনাশ ! এতবড়ো নিন্দে অতিবড়ো শত্রুও করতে পারবে না । তা হলে ডাকো-না তাকে তোমার আসরে, তার বর্তমান মেজাজটা বুঝে নিই। তাই সই। S NR ঝগড়কে বললেম, কোথায় আছে সেই বঁােদরটা। যেখানে পাও বোলাও উসকো । এল সে তার কঁাটাওয়ালা মোটা গোলাপের গুড়ির লাঠিখানা ঠকঠক করতে করতে । মালকোচ-মারা ধুতি, চাদরখানা জড়ানো কোমরে, হাঁটু পর্যন্ত কালো পশমের মোটা মোজা, লাল ডোর-কাটা জামার উপর হাতাহীন বিলিতি ওয়েস্টকোট সবুজ বনাতের, সাদা রোয়াওয়ালা রাশিয়ান টুপি মাথায়- পুরোনো মালের দোকান থেকে কেনা- বা হাতের বুড়ো আঙুলে ন্যাকড়া জড়ানোকোনো একটা সদ্য অপঘাতের প্রত্যক্ষ সাক্ষী । কড়া চামড়ার জুতোর মসিমসানি শোনা যায় গলির মোড় থেকে । ঘন ভুরুদুটাের নীচে চোখদুটাে যেন মস্ত্ৰে-থেমে-যাওয়া দুটাে বুলেটের মতো ।