পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

G:S এই বোধটা পরীক্ষকের পেনসিলমাৰ্কার অধিকারগম্য নয়। কিন্তু এর যথেষ্ট মূল্য আছে। অন্তত আমার জীবনে এইরকম পড়ে-পাওয়া জিনিস বাদ দিলে অনেকখানিই বাদ পড়বে | জ্যোতির্বিজ্ঞানের সহজ বই পড়তে লেগে গেলুম। এই বিষয়ের বই তখন কম বের হয়নি। স্যার রবট বল-এর বড়ো বইটা আমাকে অত্যন্ত আনন্দ দিয়েছে। এই আনন্দের অনুসরণ করবার আকাঙক্ষায় নিউকোম্বস, ফ্লামরিয়ী প্রভৃতি অনেক লেখকের অনেক বই পড়ে গেছি।-- গলাধঃকরণ করেছি শাসসুদ্ধ বীজসুদ্ধ। তার পরে এক সময়ে সাহস ক’রে ধরেছিলুম প্রাণতত্ত্ব সম্বন্ধে হক্সলির এক সেট প্রবন্ধমালা। জ্যোতির্বিজ্ঞান আর প্ৰাণীবিজ্ঞান কেবলই এই দুটি বিষয় নিয়ে আমার মন নাড়াচাড়া করেছে। তাকে পাকা শিক্ষা বলে না, অর্থাৎ তাতে পাণ্ডিত্যের শক্ত গাথুনি নেই। কিন্তু ক্ৰমাগত পড়তে পড়তে মনের মধ্যে বৈজ্ঞানিক একটা মেজাজ স্বাভাবিক হয়ে উঠেছিল। অন্ধবিশ্বাসের মূঢ়তার প্রতি অশ্রদ্ধা আমাকে বুদ্ধির উদ্ধৃঙ্খলতা থেকে আশা করি অনেক পরিমাণে রক্ষা করেছে। অথচ কবিত্বের এলাকায় কল্পনার মহলে বিশেষ যে লোকসান ঘটিয়েছে সে তো অনুভব করি নে । আজ বয়সের শেষপর্বে মন অভিভূত নব্যপ্রাকৃততত্ত্বে- বৈজ্ঞানিক মায়াবাদে । তখন যা পড়েছিলুম তার সব বুঝি নি। কিন্তু পড়ে চলেছিলুম। আজও যা পড়ি তার সবটা বোঝা আমার পক্ষে অসম্ভব, অনেক বিশেষজ্ঞ পণ্ডিতের পক্ষেও তাই । বিজ্ঞান থেকে র্যারা চিত্তের খাদ্য সংগ্ৰহ করতে পারেন তারা তপস্বী ||- মিষ্টান্নমিতরে জানাঃ, আমি রস পাই মাত্র। সেটা গর্ব করবার মতো কিছু নয়, কিন্তু মন খুশি হয়ে বলে যথালাভ । এই বইখানা সেই যথালাভের বুলি, মধুকরী বৃত্তি নিয়ে পাঁচ দরজা থেকে এর সংগ্ৰহ । পাণ্ডিত্য বেশি নেই। সুতরাং সেটাকে বেমালুম করে রাখতে বেশি চেষ্টা পেতে হয় নি। চেষ্টা করেছি। ভাষার দিকে । বিজ্ঞানের সম্পূর্ণ শিক্ষার জন্যে পারিভাবিকের প্রয়োজন আছে। কিন্তু পারিভাষিক চৰ্যজাতের জিনিস। দাত-ওঠার পরে সেটা পথ্য । সেই কথা মনে করে যতদূর পারি পরিভাষা এড়িয়ে সহজ ভাষার দিকে মন দিয়েছি। এই বইখানিতে একটি কথা লক্ষ্য করবে- এর নীেকোটা অর্থাৎ এর ভাষাটা যাতে সহজে চলে সে চেষ্টা এতে আছে কিন্তু মাল খুব বেশি কমিয়ে দিয়ে একে হালকা করা কর্তব্য বোধ করি নি। দয়া করে বঞ্চিত করাকে দয়া বলে না । আমার মত এই যে, যাদের মন কঁচা তারা যতটা স্বভাবত পারে নেবে, না পারে আপনি ছেড়ে দিয়ে যাবে, তাই বলে তাদের পাতটাকে প্রায় ভোজ্যশূন্য করে দেওয়া সদব্যবহার নয়। যে-বিষয়টা শেখবার সামগ্ৰী, নিছক ভোগ করবার নয়, তার উপর দিয়ে অবাধে চোখ বুলিয়ে যাওয়াকে পড়া বলা যায় না । মন দেওয়া এবং চেষ্টা করে বোঝাটাও শিক্ষার অঙ্গ, সেটা আনন্দেরই সহচর। নিজের যে-শিক্ষার চেষ্টা বাল্যকালে নিজের হাতে গ্রহণ করেছিলুম তার থেকে আমার এই অভিজ্ঞতা। এক বয়সে দুধ যখন ভালোবাসতুম না, তখন গুরুজনদের ফাকি দেবার জন্যে দুধটাকে প্রায় আগাগোড়া ফেনিয়ে বাটি ভরতি করার চক্রান্ত করেছি। ছেলেদের পড়বার বই ধারা লেখেন, দেখি তারা প্রচুর পরিমাণে ফেনার জোগান দিয়ে থাকেন । এইটো ভুলে যান, জ্ঞানের যেমন আনন্দ আছে তেমনি তার মূল্যও আছে, ছেলেবেলা থেকে মূল্য ফাকি দেওয়া অভ্যাস হতে থাকলে যথার্থ