পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিশ্বাপরিচয় (89. আছে দস্যবৃত্তি। অর্থাৎ জোর যার মুলুক তার নীতি অনুসারে একটা তারা আর-একটাকে বন্দী করে আপন সঙ্গী করে রেখেছে। অন্য মতে জুড়ির জন্ম মূল নক্ষত্রের নিজেরই অঙ্গ থেকে । বুঝিয়ে বলি । নক্ষত্ৰ যতই ঠাণ্ডা হয় ততই আঁটি হয়ে ওঠে। এমনি করে যতই হয় ঘন ততই তার ঘুরপাক হয় দ্রুত । সেই দ্রুতগতির ঠেলায় প্রবল হতে থাকে বাহিরী-মুখো বেগ। গাড়ির ঢাকা যখন ঘোরে খুব জোরে তখন তার মধ্যে এই বাহির-মুখো বেগ জোর পায় বলেই তার গায়ের কাদা ছিটকে পড়ে আর তার জোড়গুলো যদি কঁচা থাকে তা হলে তার অংশগুলো ভেঙে ছুটে যায়। নক্ষত্রের ঘুরপাকের জোর বাড়তে বাড়তে এই বাহির-মুখো বেগ বেড়ে যাওয়াতে অবশেষে একদিন সে ভেঙে দুখানা হয়ে যায়। তখন থেকে এই দুই অংশ দুই নক্ষত্র হয়ে যুগলযাত্রায় চলা শুরু করে। কোনো কোনো জুড়ির প্রদক্ষিণের এক পাক শেষ করতে লাগে অনেক হাজার বছর । কখনো দেখা যায় ঘুরতে ঘুরতে একটি আর-একটিকে আমাদের দৃষ্টিলক্ষ্য থেকে আড়াল করে দেয়, উজ্জ্বলতায় দেয় বাধা । কিন্তু উজ্জ্বলতায় বিশেষ লোকসান ঘটত না যদি আড়ালকারী নক্ষত্র অপেক্ষাকৃত অনুজ্বল না। হত । নক্ষত্রে নক্ষত্রে উজ্জ্বলতার ভেদ যথেষ্ট আছে । এমনও আছে যে কোনো নক্ষত্র তাব সব দীপ্তি হারিয়েছে। প্ৰকাণ্ড আয়তন ও প্রচওঁ উত্তাপ নিয়ে যে-সব নক্ষত্র তাদের বাল্যদশা শুরু করেছে, তিনকাল যাবার সময় তারা ঠাণ্ডা হয়ে গিয়ে খরচ করবার মতো আলোর পুঁজি ফুকে দিয়েছে । শেষ BDB SBDB D r LLL BD D DDS বেটলজিয়ুস নামে এক মহাকায় নক্ষত্র আছে, তার লাল আলো দেখলে বোঝা যায় তার বয়স হয়েছে যথেষ্ট। কিন্তু তবু জ্বলজ্বল করছে। অথচ আছে অনেক দূরে, পৃথিবীতে তার আলো পেঁৗছতে লাগে। ১৯০ বছর। আসল কথা, আয়তন এর অত্যন্ত প্ৰকাণ্ড, নিজের দেহের মধ্যে বহুকোটি সূর্যকে জায়গা দিতে পারে। ওদিকে বৃশ্চিক রাশিতে আন্টারেস নামক নক্ষত্র আছে, তার আয়তন বেটলজিয়ুজের প্রায় দুনো। আবার এমন নক্ষত্র আছে যারা গ্যাসময় বটে কিন্তু যাদের বস্তুপদার্থ ওজনে লোহার চেয়ে অনেক ভারী। মহাকায় নক্ষত্রদের কায়া যে বড়ো তার কারণ এ নয় যে, তাদের বস্তুপরিমাণ বেশি, তারা অত্যন্ত বেশি ফেপে আছে মাত্র । আবার এমন অনেক ছোটো নক্ষত্র আছে তারা যে ছোটো তার কারণ তাদের গ্যাসের সম্বল অত্যন্ত ঠাসা করে পোটলা-বাধা । সূর্যের ঘনত্ব এদের মাঝামাঝি, অর্থাৎ জলের চেয়ে কিছু বেশি ; ক্যাপেলা নক্ষত্রের গড়পড়তা ঘনত্ব আমাদের হাওয়ার সমান । কিন্তু সেখানে বায়ুপরিবর্তন করবার কথা যদি চিন্তা করি তা হলে মনে রাখতে হবে পরিবর্তন হবে দারুণ বেশি। আবার একেও ছাড়িয়ে গেছে কালপুরুষমণ্ডলীভুক্ত লালরঙের দানব, তারা বেটলজিয়ুস এবং বৃশ্চিক রাশির অ্যান্টারেস। এদের ঘনত্বের এত অত্যন্ত কমতি, পৃথিবীর কোনো পদার্থের সঙ্গে তার সুদূর তুলনাও হতে পারে না। বিজ্ঞান-পরীক্ষাগারের খুব কষে পাম্প-করা পাত্রে যেটুকু গ্যাস বাকি থাকে VS Ce a আবার অপর কিনারায় আছে সাদা রঙের বেঁটে তারাগুলো । তাদের ঘনত্বের কাছে লোহা প্লাটিনম | কিছুই ঘেঁষতে পারে না। অথচ এরা জমাট কঠিন নয়, এরা গ্যাসদেহী সূর্যেরই সগোত্র। তাদের অন্দরমহলে জ্বলুনির যে প্রচণ্ড তাপ তাতে ইলেকট্রনগুলো প্রোটনের বন্ধন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তারা খালাস পায় ঠাবোদারির দায়িত্ব থেকে- উভয়ে উভয়ের মান বাঁচিয়ে চললে যো-জায়গা জুড়ত সেটা যায় কমে, ক্রমাগতই উচ্চস্থল ভাঙা পরমাণুর মধ্যে মাথা-ঠোকাঠুকি চলতে থাকে। পরমাণুর সেই আয়তনখৰ্বতা অনুসারে নক্ষত্রের আয়তন হয়ে যায় ছোটাে। এদিকে এই ভাঙাচোরার বে-আইনি শান্তিভঙ্গ থেকে উন্মা বেড়ে ওঠে সহজ মাত্রা ছাড়িয়ে, ঘন গ্যাস ভারী হয়ে ওঠে। প্লাটিনমের তিন ইজার শুণ বেশি । সেইজন্যে বেঁটে তারাগুলো মাপে হয় ছোটো, তাপে কম হয় না, ওজনের বাড়াবাড়িতেও বড়োদের ছড়িয়ে যায়। সিরিয়াস নক্ষত্রের একটি অস্পষ্ট সঙ্গী-তারা আছে। সাধারণ গ্রহের মতো ছোটাে তার মাপ, অথচ সূর্যের মতো তার বস্তুপুজের পরিমাণ। সূর্যের ঘনত্ব জলের দেড়গুণের কিছু কম, সিরিয়সের সঙ্গীটির ঘনত্ব গড়ে জলের চেয়ে পঞ্চাশ হাজার গুণ বেশি। একটা