পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(ሰ8br রবীন্দ্র-রচনাবলী গ্ৰহলোক গ্ৰহ কাকে বলে সে-কথা পূর্বেই বলা হয়েছে। সূর্য হল নক্ষত্র ; পৃথিবী হল গ্রহ, সূর্য থেকে ছিড়ে-পড়া টুকরো, ঠাণ্ডা হয়ে তার আলো গেছে নিবে। কোনো গ্রহেরই আপনি আলো নেই। সূর্য্যে চার দিকে এই গ্রহদের প্রত্যেকের নির্দিষ্ট পথ ডিম্বরেখাকারে- কারও-বা পথ সূর্যের কাছে, কারও বা পথ সূর্য থেকে বহু দূরে । সূর্যকে ঘুরে আসতে কোনো গ্রহের এক বছরের কম লাগে, কারও বা একশো বছরের বেশি। যে-গ্রহেরই ঘুরতে যত সময় লাগুক এই ঘোরার সম্বন্ধে একটি বাধা নিয়ম আছে, তার কখনোই ব্যতিক্রম হয় না। সূৰ্যপরিবারের দূর বা কাছের ছোটাে বা বড়ো সকল গ্রহকেই পশ্চিম দিক থেকে পূব দিকে প্ৰদক্ষিণ করতে হয়। এর থেকে বোঝা যায় গ্রহেরা সূর্য থেকে একই অভিমুখে ধাক্কা ধেয়ে ছিটকে পড়েছে, তাই চলাবার ঝোক হয়েছে একই দিকে। চলতি গাড়ি থেকে নেমে পড়বার সময় গাড়ি যে মুখে চলেছে সেই দিকে শরীরের উপর একটা ঝোক আসে। গাড়ি থেকে পাঁচজন নামলে পাঁচজনেরই সেই এক দিকে হবে ঝোক । তেমনি ঘূর্ণ্যমান সূর্য থেকে বেরিয়ে পড়বার সময় সব গ্রহই একই দিকে ঝোক পেয়েছে। ওদের এই চলার প্রবৃত্তি থেকে ধরা পড়ে ওরা সবাই এক জাতের, সবাই একক্টোকা । সূর্যের সব চেয়ে কাছে আছে বুধগ্ৰহ, ইংরেজিতে যাকে বলে মার্করি। সে সূর্য থেকে সাড়ে-তিন কোটি মাইল মাত্র দূরে। পৃথিবী যতটা দূর বঁচিয়ে চলে তার প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ। বুধের গায়ে ঝাপসা কিছু কিছু দাগ দেখা যায়, সেইটে লক্ষ্য করে বোঝা গেছে। কেবল ওর এক পিঠা ফেরানো সূর্যের দিকে। সূর্যের চার দিক ঘুরে আসতে ওর লাগে ৮৮ দিন । নিজের মেরুদণ্ড ঘুরতেও ওর লাগে তাই। সূৰ্যপ্ৰদক্ষিণের পথে পৃথিবীর দৌড় প্রতি সেকেণ্ডে উনিশ মাইল। বুধগ্রহের দৌড় তাকে ছাড়িয়ে গেছে, তার বেগ প্রতি সেকেণ্ডে ত্ৰিশ মাইল। একে ওর রাস্তা ছোটাে তাতে ওর ব্যস্ততা বেশি, তাই পৃথিবীর সিকি সময়েই ওর প্রদক্ষিণ সারা হয়ে যায়। বুধগ্রহের প্রদক্ষিণের যে-পথ সূর্য ঠিক তার কেন্দ্রে নেই, একটু একপাশে আছে। সেইজন্যে ঘোরবার সময় বুধগ্ৰহ কখনো সূর্যের অপেক্ষাকৃত কাছে আসে कथाना या नृद्ध । এই গ্ৰহ সূর্যের এত কাছে থাকাতে তাপ পাচ্ছে খুব বেশি। অতি সূক্ষ্ম পরিমাণ তাপমাপবার একটি যন্ত্র বেরিয়েছে, ইংরেজিতে তার নাম thermo-couple ৷ তাকে দূরবীনের সঙ্গে জুড়ে গ্ৰহতারার তাপের খবর জানা যায়। এই যন্ত্রের হিসাব অনুসারে, বুধগ্রহের যে-অংশ সূর্যের দিকে ফিরে থাকে তার তাপ সীসে টিন গলাতে পারে। এই তাপে বাতাসের অণু এত বেশি বেগে চঞ্চল হয়ে ওঠে যে বুধগ্ৰহ তাদের ধরে রাখতে পারে না, তারা দেশ ছেড়ে শূন্যে দেয় দৌড়। বাতাসের অণু পলাতক স্বভাবের। পৃথিবীতে তারা সেকেণ্ডে দুইমাইলমাত্র বেগে ছুটােছুটি করে, তাই টানের জোরে পৃথিবী তাদের সামলিয়ে রাখতে পারে। কিন্তু যদি কোনো কারণে তাপ বেড়ে উঠে ওদের দৌড় হত সেকেণ্ডে সাত মাইল, তা হলেই পৃথিবী আপন হাওয়াকে আর বশ মানাতে পারত না। যে-সব বিজ্ঞানী বিশ্বজগতের হিসাবনবিশ তাদের একটা প্রধান কাজ হচ্ছে গ্ৰহ নক্ষত্রের ওজন ঠিক করা । এ কাজে সাধারণ দাড়িপাল্লার ওজন চলে না, তাই কৌশলে ওদের খবর আদায় করতে হয় । সেই কথাটা বুঝিয়ে বলি। মনে করো একটা গড়ানে গোলা হঠাৎ এসে পথিককে দিলে ধাক্কা, সে পড়ল দশ হাত দূরে । কতখানি ওজনের গোলা এসে জোর লাগালে মানুঘটা এতখানি বিচলিত হয় তার নিয়মটা যদি জানা থাকে তা হলে এ দশ হাতের মাপটা নিয়ে গোলটার ওজন অঙ্ক কষে বের করা যেতে পারে। একবার হঠাৎ এইরকম অঙ্ক কবার সুযোগ ঘটাতে বুধগ্রহের ওজন মাপা সহজ হয়ে গেল। সুবিধাটা ঘটিয়ে দিলে একটা ধূমকেতু । সে কথাটা বলবার আগে বুঝিয়ে দেওয়া দরকার ধুমকেতুরা কী রকম ধরনের জ্যোতিষ্ক । ধূমকেতু শব্দের মানে ধোয়ার নিশান । ওর চেহারা দেখে নামটার উৎপত্তি। গোল মুণ্ড আর তার পিছনে উড়ছে উজ্জ্বল একটা লম্বা পুচ্ছ। সাধারণত এই হল ওর আকার । এই পুছিটা অতি সূক্ষর