পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাভাষা-পরিচয় SA তারা ধাক্কা দেয় জোরে। stand up শব্দ উভয় মিলে দুই মাত্রার বটে কিন্তু তাতে দুই ব্যঞ্জনবর্ণের দুটাে ঠোকর আছে । “দাড়াও’ শব্দটাও দুই মাত্রার, কিন্তু তার আগোগোড়া স্বয়বৰ্ণ, তাদের স্পর্শ মোলায়েম। কথাটা করে ছোটে না । ‘তুই’ ‘তোরা বর্গের অনুজ্ঞায় এই দুর্বলতা নেই! বোস ওঠ ছোট থামােকাট মারধর খেল ; এগুলি দৌড়দার শব্দ। আদিকালে ভাষায় "তু “তুই ছিল একমাত্র মধ্যম পুরুষের সর্বনাম শব্দ । সেটা যদি চলে আসত তা হলে ক্রিয়াপদকে স্বরবর্ণ এমন নরম করে রাখত না, হসন্ত ব্যঞ্জনবর্ণে তাকে তীক্ষতা দিত । ‘করো হত 'কর,'। 'কোরো হত ‘করিস। ‘দাঁড়া শব্দ যদিও স্বরবর্ণ বহন করে তবু দাড়াও শব্দের চেয়ে তার মধ্যে প্ৰভুশক্তি বেশি। ‘ঘুমে আর ঘুমেও তুলনা করলে অনুজ্ঞার দিক থেকে প্রথমোক্তটির প্রবলতা মানতে হয় । চলতি বাংলা ভঙ্গিপ্রধান ভাষা, তার একটা লক্ষণ ক্রিয়াপদের অনুজ্ঞায় অসংগত ভাবে 'না' শব্দের ব্যবহার । এর কাজ হচ্ছে আদেশ বা অনুরোধকে অনুনয়ে নরম করে আনা । ‘হোক না করেই না’ ক্রিয়াপদে না’ শব্দে নির্বন্ধ প্রকাশ পায়, কোনো-এক পক্ষের অনিচ্ছাকে যেন ঠেলে দেওয়া । 'ন' শব্দের দ্বারা ‘ই’ প্ৰকাশ করা আর প্রথমপুরুষ-বাচক আপনিীকে মধ্যম পুরুষের অর্থে ব্যবহার একই মনস্তত্ত্বমূলক । যিনি উপস্থিত আছেন যেন তিনি উপস্থিত নেই, তার সঙ্গে মোকাবিলায় কথা বলার স্পর্ধ বক্তার পক্ষে সম্ভব নয়, এই ভানের দ্বারাই ঠার উপস্থিতির মূল্য যায় বেড়ে । তেমনি অনুরোধ জানানোর পরীক্ষণেই 'না' বলে তার প্রতিবাদ করে অনুরোধের মধ্যে সম্মানের কাকুতি এনে দেওয়া হয়। 'না' শব্দের ক্রিয়াপদের রূপ বাংলাভাষার আর-একটি বিশেষত্ব, যথা : আমি নই, তুমি নও, সে নয়, তিনি নন, আমি নেই, তুমি নেই, সে নেই, তিনি নেই ; হই নে, श्8 ना, श्न ना, श्श नेि, श्न नेि । বাংলা ক্রিয়াপদে নানারকম শব্দ-যোজনায় নানারকম ভঙ্গি। তার কতকগুলি সার্থক, কতকগুলি নিরর্থক । ক্রিয়াপদে এতরকম ইশারা বোধ হয় আর-কোনো ভাষায় নেই। পড়ল বা, করলে বা, শব্দে আশঙ্কার সূচনা। কোনো ক্রিয়াবিশেষণে যোগে এর ভাবটা প্রকাশ হতে পারত না । এতে যদি ইকার যোগ করা যায় তাতে আর-একরকম ভঙ্গি এসে পড়ে। হলই বা, করলেই বা ; এর ভঙ্গিতে সুরের বৈচিত্ৰ্য অনুসারে ক্ষমতাও বোঝাতে পারে, স্পর্ধাও বোঝাতে পারে, উপেক্ষাও Glko 93 হল বুঝি, করল বুঝি, হল বলে, করল বলে : আসন্ন অপ্রিয়তার আশঙ্কা । ] হল যে, করল যে ; উদবেগ । হল তো, করলে তো ; অপ্রত্যাশিতের সম্বন্ধে বিস্ময় । আবার ওকেই প্রশ্নের সুরে বদলিয়ে যদি বলা হয় 'হল তো ?’ তা হলে জানানো হয় : এখন তো আর কোনো নালিশ রইল না ? হােক না, করুক না, হােকগে, কারুকগে, মরুকগে ; ঔদাসীন্য। হলই বা, করলেই বা, নাই বা হল, নাহয় হল : স্পর্ধার ভাষা। হবে বা, হবেও বা ; দ্বিধা এবং স্বীকার মিশিয়ে । হবেই হবে, করবেই করবে ; সুনিশ্চিত প্রত্যাশা। করতেই হবে, হতেই হবে, করাই চাই, হওয়াই চাই ; ইচ্ছার জোর প্রয়োগ । হলেই হল : অর্থাৎ হয় যদি তবে আর-কোনো তর্কের দরকার নেই।