পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পথের সঞ্চয় ህ6ꬃ দুটিয়াছে। তাহারা মনে করে, বাস্তবের উপর জোরের সঙ্গে ঝোক দিলেই যেন আর্টের কাজ সৃসিদ্ধ হয় । এইজন্য নারদকে আঁকিতে গেলে তাহারা যাত্রার দলের নারদকে আঁকিয়া বসে- কারণ, ধ্যানের দৃষ্টিতে দেখা তো তাহদের সাধনা নহে ; যাত্রার দলে ছাড়া আর তো কোথাও তাহারা নারদকে দেখে 2ाँ ! আমাদের দেশে বীেন্ধযুগে একদা গ্ৰীক-শিল্পীরা তাপস বুদ্ধের মূর্তি গড়িয়ছিল। তাহা উপবাসজীৰ্ণ কুশ শরীরের যথাযথ প্রতিরূপ ; তাহাতে পাজরের প্রত্যেক হাড়টির হিসাব গণিয়া পাওয়া যায়। ভারতবষীয় শিল্পীও তাপস বুদ্ধের মূর্তি গড়িয়ছিল, কিন্তু তাহাতে উপবাসের বাস্তব ইতিহাস নাই। তাপসের আন্তর মূর্তির মধ্যে হাড়গোড়ের হিসাব নাই ; তাহা ডাক্তারের সাটিফিকেট লাইবার জন্য নহে । তাহা বান্তবকে কিছুমাত্র আমল দেয় নাই বলিয়াই সত্যকে প্রকাশ করিতে পারিয়াছে। ব্যবসায়ী আটিস্ট বান্তবের সাক্ষী, আর গুণী আটিস্ট সত্যের সাক্ষ্মী । বাস্তবকে চোখ দিয়া দেখি আর সত্যকে মন দিয়া ছাড়া দেখিবার জো নাই। মন দিয়া দেখিতে গেলেই চোখের সামগ্ৰীীর দীেরাত্ম্যকে খর্ব করিতেই হইবে ; বাহিরের রূপটাকে সাহসের সঙ্গে বলিতেই হইবে, “তুমি চরম নও, তুমি পরম নও, তুমি লক্ষ্য নও, তুমি সামান্য উপলক্ষমাত্র।” আরব-সমুদ্র See Sey খেলা ও কাজ ভূমধ্য-সাগরের প্রথম ঘাট পোর্ট-সৈয়দ । এইখান হইতে আমাদিগকে যুরোপের পারে পাড়ি দিতে হইবে। সন্ধ্যার সময় আমরা বন্দরে পৌছিলাম। শহরের বাতায়নগুলিতে তখন আলো জ্বলিয়াছে। আরোহীদিগকে ডাঙায় পৌছাইয়া দিবার জন্য ছোটাে ছোটাে নীেকা এবং মোটর-বোট ঝাকে ঝাকে চারি দিকে আসিয়া আমাদের জাহাজ ঘিরিয়াছে। পোর্ট-সৈয়দের দোকান-বাজার ঘুরিবার জন্য অনেকেই সেখানে নামিলেন । আমি সেই ভিড়ের মধ্যে নামিলাম না । জাহাজের রেলিঙ ধরিয়া দাড়াইয়া দেখিতে লাগিলাম। অন্ধকার সমুদ্র এবং অন্ধকার আকাশ- দুইয়ের সংগমস্থলে অল্প দুঃখ জায়গায় অন্য আপনার আলো কািট স্বালাইয়া বাহিকে একেবারে অধীকার কািরয়া পোর্ট-সৈয়দে অনেকগুলি নূতন আরোহী উঠিবার কথা। পুরাতনের দল এই সংবাদে বিশেষ ক্ষুব্ধ হইয়া উঠিয়াছে। আর-সমন্ত নূতনকে মানুষ খুঁজিয়া বাহির করে, কিন্তু নূতন মানুষ ! এমন উদবেগের বিষয় আর-কিছুই নাই। সে কাছে আসিলে তাহার সঙ্গে ভিতরে বাহিরে বোঝাপড়া করিয়া লইতেই হইবে। সে তো কেবলমাত্র কীেতুহলের বিষয় নহে। তাহার মান লইয়া সে অন্যের মনকে ঠেলাঠেলি করে । মানুষের ভিড়ের মতো এমন ভিড় আর নাই । পোর্ট-সৈয়দে যাহারা জাহাজে চড়িল তাহারা প্রায় সকলেই ফরাসি । আমাদের ডেক এখন মানুষে । মানুষে ভরিয়া গিয়াছে। এখন পরস্পরের দেহতরী বঁাচাইয়া চলিতে হইলে রীতিমত মাবিগিরির egछिको छ । সকাল হইতে রাত্রি দশটা পর্যন্ত ডেকের উপর য়ুরোপীয় নরনারীদের প্রতিদিনের কালব্যাপন আমি আরো কয়েকবার দেখিয়াছি, এবারও দেখিতেছি। প্রথমটাই চোখে পড়ে, ইহারা সর্বদাই চঞ্চল হইয়া আছে । এতটা চাঞ্চল্য আমাদের অভ্যন্ত নহে। আমাদের গরম দেশে আমরা কোনোমতে ঠাণ্ডা থাকিতে চাই- চোখের সামনে অন্য কেহ অস্থিরতা প্রকাশ করলেও আমাদের গরম বোধ হয়। “চুপ