পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

9 Vetre বিস্তর গাড়ির আনাগোনা সেখানে পঁাচ মিনিট সময়ের ব্যতিক্রম হইলেই নানা দিকে গোল বাধিয়া যায় এবং তাহা সহ্য করা শক্ত হয় । আমাদের অত্যন্ত ঘোরো সমাজ বলিয়াই অথবা সেই ঘোরো অভ্যাস আমাদের মজাগত বলিয়াই, পরম্পরের সম্বন্ধে আমাদের ব্যবহারে দেশকালের বন্ধন নিতান্তই আলগা- আমরা যথেচ্ছা জায়গা জুড়িয়া বসি, সময় নষ্ট করি, এবং ব্যবহারের বাধাৰ্বিাধিকে আত্মীয়তার অভাব বলিয়া নিন্দা করিয়া থাকি । ইংরেজি সমাজে ঐখানেই সাব-প্ৰথমে আমাদের বাধে ; সেখানে বাহ্য ব্যবহারে আপনি ইচ্ছামত যাহ-তাহা করিয়া সকলের কাছা হইতে ক্ষমা প্ৰত্যাশা করিবার অধিকার কাহারও নাই। গড়ে সকলের যাহাতে সুবিধা সেইটের অনুসরণ করিয়া ইহারা নানা বন্ধন স্বীকার করিয়াছে। ইহাদিগকে দেখাসাক্ষাৎ নিমন্ত্রণ আমন্ত্রণ বেশভূষা আদর-অভ্যর্থনার নিয়ম পাকা করিয়া রাখিতে হইয়াছে। যাহা বস্তুত আত্মীয়সমাজ নহে। সেখানে আমীয়সমাজের টিলা নিয়ম চালাইতে গেলেই সমস্ত অত্যন্ত বীভৎস হইয়া পড়ে এবং জীবনযাত্রা অসম্ভব হইয়া উঠে । য়ুরোপের এই ব্যাপক সমাজ এখনো কোনো সমাধানের মধ্যে আসিয়া পৌঁছে নাই। তাহা আচারে ব্যবহারে বাহিরের দিকে একটা বাধাৰ্বিাধির মধ্যে আপনাকে সংযত ও শ্ৰীসম্পন্ন করিতে চেষ্টা করিয়াছে, কিন্তু সমাজের ভিতরকার শক্তিগুলি এখনো আপনাদিগকে কোনো একটা ঐক্যসূত্রে বঁধিয়া পরস্পরের সংঘাত সম্পূর্ণ বাচাইয়া চলিবার ব্যবস্থা করিতে পারে নাই। যুরোপ কেবলই পরীক্ষা পরিবর্তন এবং বিপ্লবের ভিতর দিয়া চলিতেছে। সেখানে স্ত্রীলোকের সঙ্গে পুরুষের, ধর্মসমাজের সঙ্গে কর্মসমাজের, রাজশক্তির সঙ্গে প্রজাশক্তির, কারবারী-দলের সঙ্গে মজুর-দলের কেবলই দ্বন্দ্ব বাধিয়া উঠিতেছে। চন্দ্ৰমণ্ডলের মতো তাহার যাহা হইবার তাহা হইয়া যায় নাই- এখনো তাহা আগ্নেয়গিরি অগ্নি-উদগারের জন্য প্ৰস্তুত আছে । কিন্তু, আমরাই সমস্ত সমস্যার সমাধান করিয়া, সমাজব্যবস্থা চিরকালের মতো পাকা করিয়া, মৃতদেহের মতো সম্পূর্ণ নিশ্চিন্তু হইয়া বসিয়া আছি, এ কথা বলিলে চলিবে কেন। সময় উত্তীর্ণ হইলেও ব্যবস্থাকে কিছুদিনের মতো খাড়া রাখিতে পারি, কিন্তু অবস্থাকে তাে সেইসঙ্গে বাধিয়া রাখিতে পারি না। সমস্ত পৃথিবীর সঙ্গে আমরা মুখামুখি হইয়া দাড়াইয়াছি, এখন ঘোরো সমাজ লইয়া আর আমাদের চলিতেই পারে না- ইহারা কেবলমাত্র বাপ দাদা খুড়া নহে, ইহারা বাহিরের লোক, ইহারা দেশ-বিদেশের মানুষ ; ইহাদের ব্যবহার করিতে হইলে সতর্ক ও সচেষ্ট হইতেই হইবে ; অন্যমনস্ক হইয়া, ঢিলেঢালা হইয়া যদি চলিতে যাই। তবে একদিন অচল হইয়া উঠিবেই। আমরা সনাতন প্রথার দোহাই দিয়া গর্ব করি, কিন্তু এ কথা একেবারেই সত্য নহে যে, ভারতবর্ষের LBBBD BBB BD DDD DDDuD DB BD SSDBBDBB BDBB DD DBD DDBDB BBDBDD অগ্রসর হইতে হইয়াছে, তাহাতে সন্দেহমাত্র নাই- এবং ইতিহাসে তাহার চিহ্ন পাওয়া যায়। কিন্তু, তাহার চলা একেবারে শেষ হইয়াছে, এখন হইতে অনন্তকাল সে সনাতন হইয়া বসিয়া থাকিবে, এমন অদ্ভুত কথা মুখে উচ্চারণ করিতেও চাই না। এক-একটা বড়ো বড়ো বিপ্লবের পর সমাজের ক্লান্তি আসে ; সেই সময় সে দ্বার বন্ধ করিয়া, আলো নিভাইয়া, ঘুমের আয়োজন করে। বৌদ্ধবিপ্লবের পর ভারতবর্ষ শক্ত নিয়মের হুড়কায় সমস্ত দরজা জানলা বন্ধ করিয়া একেবারে স্থির হইয়া শুইয়া পড়িয়ছিল। তাহার ঘুম আসিয়াছিল। কিন্তু ইহাকে অনন্ত ঘুম বলিয়া গর্ব করিলে সেটা হাস্যকর অথচ সকরুণ হইয়া উঠিবে। ঘুম ততক্ষণই ভালো যতক্ষণ রাত্রি থাকে- বাহিরে যতক্ষণ লোকের ভিড় নাই, বড়ো বড়ো দোকান-বাজার যতক্ষণ বন্ধ। কিন্তু, সকালে যখন চারিদিকে হাঁকডাক পড়িয়া গৈছে, তুমি চুপচাপ পড়িয়া থাকিলেও আর-কেহ যখন চুপ করিয়া নাই, তখন সনাতন দরজা আটে-ঘাটে বন্ধ করিয়া থাকিলে অত্যন্ত ঠকিতে হইবে । য়াফ্রিকালের বিধান সাদাসিধা ; তাহার আয়োজন স্বল্প; তাহার প্রয়োজন সামান্য। এইজন্য সমন্ত ব্যবস্থা বেশ সহজেই সম্পূর্ণ করিয়া, নিরুদবিয়া হইয়া চোখ বােজা সম্ভব হয় ; তখন যেখানে যেটি রাখি সেখানে সেটি পড়িয়া থাকে, কারণ, নাড়া দিবার কেহনাই। দিনের বেলাকার ব্যবস্থা তত সহজ নহে; এবং তাঁহা ভোরের বেলা একেবারের মতো সরিয়া ফেলিয়া তাহার পর সমন্ত দিনটা নিশ্চিন্ত হইয়া