পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সঞ্চয় ዓo© পথ সর্বাপেক্ষা উন্মুক্ত বলিয়াই মানুষ যে পথ ভুলিয়া থাকে, রাজা যে পথে বাধা দিতে পারে না এবং দারিদ্র্য যে পথের পাথেয় হরণ করতে অক্ষম, স্পষ্ট দেখিতেছি, সেই ধর্মের পথ আমাদের এই সর্বত্রপ্রতিহত চিত্তকে মুক্তির দিকে টানিতেছে । আমাদের দেশে এই পথযাত্রার আহবান বারংবার নানা দিক হইতে নানা কণ্ঠে জাগিয়া উঠিতেছে। এই ধর্মবোধের জাগরণের মতো এত বড়ো জাগরণ জগতে আর-কিছু নাই, ইহাই মুককে কথা বলায়, পদুকে পর্বত লঙ্ঘন করায়। ইহা আমাদের সমস্ত চিত্তকে চোঁতাইবে, সমস্ত চেষ্টাকে চালাইবে ; ইহা আশার আলোকে এবং আনন্দের সংগীতে আমাদের বহুদিনের বঞ্চিত জীবনকে গীেরবান্বিত করিয়া তুলিবে । মানবজীবনের সেই পরম লক্ষ্য যতই আমাদের সম্মুখে স্পষ্ট হইয়া উঠিতে থাকিবে ততই আপনাকে অকৃপণভাবে আমরা দান করিতে পারিব, এবং সমস্ত ক্ষুদ্র আকাঙক্ষার জাল ছিন্ন হইয়া পড়িবে। আমাদের দেশের এই লক্ষ্যকে যদি আমরা সম্পূর্ণ সচেতনভাবে মনে রাখি। তবেই আমাদের দেশের শিক্ষাকে আমরা সত্য আকার দান করিতে পারিব । জীবনের কোনো লক্ষ্য নাই। অথচ শিক্ষা আছে, ইহার কোনো অর্থই নাই। আমাদের ভারতভূমি তপোতৃভূমি হইবে, সাধকের সাধনক্ষেত্র হইবে, সাধুর কর্মস্থান হইবে, এইখানেই ত্যাগীর সর্বোচ্চ আন্মোৎসর্গের হোমাগ্নি জ্বলিবে- এই গৌরবের আশাকে যদি মনে রাখি। তবে পথ আপনি ಸ್ಥಳೀ: এবং অকৃত্রিম শিক্ষাবিধি আপনি আপনাকে অঙ্কুরিত পল্লবিত ও ফলবান করিয়া চ্যািলফোর্ড। গ্লস্টরশিয়ার ya V6 SYS আমেরিকার চিঠি আজ রবিবার। গির্জার ঘণ্টা বাজিতেছে। সকালে চোখ মেলিয়াই দেখিলাম, বরফে সমস্ত সাদা হইয়া গিয়াছে। বাড়িগুলির কালো রঙের ঢালু ছাদ এই বিশ্বব্যাপী সাদার আবির্ভাবকে বুক পাতিয়া দিয়া বলিতেছে, “আধো আঁচরে বোসো !' মানুষের চলাচলের রাস্তায় ধূলাকাদার রাজত্ব একেবারে ঘুচাইয়া দিয়া শুভ্রতার নিশ্চল ধারা যেন শতধা হইয়া বহিয়া চলিয়াছে। গাছে একটিও পাতা নাই ; শুক্রম শুদ্ধমপাপবিদ্ধম ডালগুলির উপরের চূড়ায় তাহার আশীৰ্বাদ বর্ষণ করিয়াছেন। রাস্তার দুই ধারের ঘাস যৌবনের শেষ চিহ্নের মতো এখনো সম্পূৰ্ণ আচ্ছন্ন হয় নাই, কিন্তু তাহারা ধীরে ধীরে মাথা হেঁট করিয়া হার মানিতেছে। পাখিরা ডাক বন্ধ করিয়াছে, আকাশে কোথাও কোনো শব্দ নাই। বরফ উড়িয়া উড়িয়া পড়িতেছে, কিন্তু তাহার পদসঞ্চার কিছুমাত্র শোনা যায় না- বর্ষা আসে বৃষ্টির শব্দে, ডালপালার মর্মরে, দিগদিগন্ত মুখরিত করিয়া দিয়া রাজবদুন্নতধ্বনি- কিন্তু আমরা সকলেই যখন ঘুমাইতেছিলাম, আকাশের তোরণদ্বার তখন নীরবে খুলিয়াছে, সংবাদ লইয়া কোনো দূত আসে নাই, সে কাহারও ঘুম ভাঙাইয়া দিল না। স্বৰ্গলোকের নিভৃত আশ্রম হইতে নিঃশব্দতা মর্তে নামিয়া আসিতেছেন ; তাহার ঘর্ঘরনিনাদিত রথ নাই, মাতলি তাহার মত্ত ঘোড়াকে বিদ্যুতের কশাঘাতে ইকাইয়া আনিতেছি না ; ইনি নামিতেছেন ইহার সাদা পাখা মেলিয়া দিয়া, অতি কোমল তাহার সঞ্চার, . অতি অবাধ তাহার গতি ; কোথাও তাহার সংঘর্ষ নাই, কিছুকেই সে কিছুমাত্র আঘাত করে না। সূৰ্য আবৃত, আলোকের প্রখরতা নাই ; কিন্তু, সমন্ত পৃথিবী হইতে একটি অপ্ৰগলভ দীপ্তি উদভাসিত হইয়া উঠিতেছে, এই জ্যোতি যেন শান্তি এবং নম্রতায় সুসমন্বৃত, ইহার অবগুণ্ঠনই ইহার প্রকাশ। অন্ধ শীতের প্রভাতে এই অপরূপ শুভ্রতার নির্মল আবির্ভাবকে আমি নত হইয়া নমস্কার করি।-- ইহাকে আমার অন্তরের মধ্যে বরণ করিয়া লই। বলি, “তুমি এমনি ধীরে ধীরে ছাইয়া ফেলো ; আমার সমস্ত চিন্তা, সমন্ত কল্পনা, সমস্ত কর্ম আবৃত করিয়া দাও । গভীর রাত্রির অসীম অন্ধকার পার হইয়া তোমার নির্মলতা আমার জীবনে নিঃশব্দে অবতীর্ণ হউক, আমার নবপ্রভাতকে অকলঙ্ক শুভ্রতার মধ্যে