পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সভ্যতার সংকট se গভর্নমেন্টের প্রভাব কোনো অংশে অসন্মানকর নয় এবং তাতে মনুষ্যত্বের হানি করেন। সেখানকার শাসন বিদেশীয় শক্তির নিদারুশ নিম্পেকণী যন্ত্রের শাসন নয়। দেখে এসেছি, পারস্যদেশ একদিন দুই যুরোপীয় জাতির জাতার চাপে যখন পিট হছিল তখন সেই নির্মম আক্রমণের যুরোপীয় দ্রাঘাত থেকে আপনাকে মুক্ত করে কেমন করে এই নবজাগ্ৰত জাতি আত্মশক্তির পূর্ণতাসাধনে প্রবৃত্ত হয়েছে। দেখে এলেম, জরথুষ্টয়ানদের সঙ্গে মুসলমানদের এক কালে যে সাংঘাতিক প্রতিযোগিতা ছিল বর্তমান সভ্যশাসনে তার সম্পূর্ণ উপশম হয়ে গিয়েছে। তার সৌভাগ্যের প্রধান কারণ এই যে, সে যুরোপীয় জাতির চক্রান্তজাল থেকে মুক্ত হতে পেরেছিল। সর্বািন্তকরণে আজ আমি এই পারস্যের কল্যাণ কামনা করি। আমাদের প্রতিবেশী আফগানিস্থানের মধ্যে শিক্ষা এবং সমাজনীতির সেই সার্বজনীন উৎকর্ষ যদিচ এখনো ঘটে নিকিন্তু তার সম্ভাবনা অক্ষুধা রয়েছে, তার একমাত্র কারণ-সভ্যতাগবিত কোনো যুরোপীয় জাতি তাকে আজও অভিভূত করতে পারে নি। এরা দেখতে দেখতে চার দিকে উন্নতির পথে, মুক্তির পথে, অগ্রসর হতে চলল। ভারতবর্ষ ইংরেজের সভ্যশাসনের জগদ্দল পাথর বুকে নিয়ে তলিয়ে পড়ে রইল নিরুপায় নিশ্চলতার মধ্যে। চৈনিকদের মতন এত বড়ো প্ৰাচীন সভ্য জাতিকে ইংরেজ স্বজাতির স্বার্থসাধনের জন্য বলপূর্বক অহিফেনবিষে জর্জরিত করে দিলে এবং তার পরিবর্তে চীনের এক অংশ আত্মসাৎ করলে। এই অতীতের কথা যখন ক্রমশ ভুলে এসেছি তখন দেখলুম। উত্তর চীনকে জাপান গলাধঃকরণ করতে প্ৰবৃত্ত ; ইংলন্ডের রাষ্ট্রনীতিপ্ৰবীণরাকী অবজ্ঞাপূর্ণঔদ্ধত্যের সঙ্গে সেইদিসুবৃত্তিকে তুচ্ছ বলে গণ্য করেছিল। পরে এক সময়ে স্পেনের প্রজাতন্ত্র-গভর্নমেন্টের তলায় ইংলন্ড কিরকম কৌশলে ছিদ্র করে দিলে, তাও দেখলাম। এই দূর থেকে । সেই সময়েই এণ্ড দেখেছি, একদল ইংরেজ সেই বিপদগ্ৰন্ত স্পেনের জন্য আত্মসমৰ্পণ করেছিলেন। য়দিও ইংরেজের এই ঔদার্থ প্রাচ্য চীনের সংকট যথোচিত জাগ্রত হয়নি, তবু য়ুরোপীয় জাতির প্রজাস্বাতন্ত্র্য রক্ষার জন্য যখন তাদের কোনো বীরকে প্ৰাণপাত করতে দেখলুম। তখন আবার একবার মনে পড়ল, ইংরেজকে একদা মানবহিতৈষীরূপে দেখেছি, এবং কী বিশ্বাসের সঙ্গে ভক্তি করেছি। য়ুরোপীয় জাতির স্বভাবগত সভ্যতার প্রতি বিশ্বাস ক্রমে কী করে হারানো গেল তারই এই শোচনীয় ইতিহাস আজ আমাকে জানতে হল। সভ্যশাসনের চালনায় ভারতবর্ষের সকলের চেয়ে যে দুৰ্গতি আজ মাথা তুলে উঠেছে। সে কেবল অন্ন বস্ত্ৰ শিক্ষা এবং আরোগ্যের শোকাবহু অভাব মাত্র নয় ; সে হচ্ছে ভারতবাসীর মধ্যে অতি নৃশংস আত্মবিচ্ছেল, যার কোনো তুলনা দেখতে পাই নি ভারতবর্ষের বাইরে মুসলমান স্বায়ত্তশাসন-চালিত দেশে। আমাদের বিপদ এই যে, এই দুৰ্গতির জন্যে আমাদেরই সমাজকে একমাত্র দায়ী করা হবে। কিন্তু এই দুৰ্গতির রূপ যে প্রত্যহই ক্রমশ উৎকট হয়ে উঠেছে, সে যদি ভারতশাসনযন্ত্রের উৰ্ব্বতরে কোনো-এক গোপন কেন্দ্রে প্রশ্ৰয়ের আরা পেষিত না হত তা হলে কখনোই ভারত-ইতিহাসের এতবড়ো অপমানকর অসভ্য পরিণাম ঘটতে পারত না। ভারতবাসী যে বুদ্ধিসামর্থ্যে কোনো অংশে জাপানের চেয়ে নন, এ কথা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এই দুই প্ৰাচ্যদেশের সর্বপ্রধান প্ৰভেদ এই, ইংরেজ শাসনের দ্বারা সর্বতোভাবে অধিকৃত ও অভিভূত ভারত, আর জাপান এইরূপ কোনো পাশ্চাত্য জাতির পক্ষীছায়ার আবরণ থেকে মুক্ত। এই বিদেশীয় সভ্যতা, যদি একে সভ্যতা বলে, আমাদের কী অপহরণ করেছে তা জানি ; সে তার পরিবর্তে দণ্ড হাতে স্থাপন করেছে। DBBDBLB LLLLLL LLLLLLLLS D g BBSK DBiuu BBDDBS KBDLDD মাত্র। পাশ্চাত্য জাতির সভ্যতা-অভিমানের প্রতি শ্ৰদ্ধা রাখা অসাধ্য হয়েছে। সে তার শক্তিরূপ আমাদের দেখিয়েছে, মুক্তিরূপ দেখতে পারেনি। অর্থাৎ, মানুষে মানুষে যে সম্বন্ধ সবচেয়ে মূল্যবান এবং যাকে যথার্থসভ্যতা বলা যেতে পারে তার কৃপণতা এই ভারতীয়দের উন্নতির পথ সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ করে দিয়েছে। অথচ, আমার ব্যক্তিগত সৌভাগ্যক্রমে মাঝে মাঝে মহােদশীয় ইংরেজের সঙ্গে আমার মিলন ঘটেছে। এই মহত্ব আমি অন্য কোনো জাতির কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে দেখতে পাইনি। ঐরা আমার বিশ্বাসকে ইংরেজ জাতির প্রতি আজও বেঁধে রেখেছেন। দৃষ্টিতাহলে এভুজের নাম করতে