পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী والا چ যাইবে আর নীলকণ্ঠ আরামে একাধিপত্য করিবে, এ কল্পনা সে সহ করিতে পারিল না। এখনি কোনো একটা গুরুতর অনিষ্ট করিতে না পারিলে তাহার মন শাস্ত হইতে পারিতেছে না। সে বলিল, ‘নীলকণ্ঠ কেমন বিষয় রক্ষা করিতে পারে আমি তাহা দেখিব।” বাহিরে তাহার পিতার ঘরে গিয়া দেখিল, সে ঘরে কেহই নাই। সকলেই অন্তঃপুরের তৈজসপত্র ও গহন প্রভৃতির খবরদারি করিতে গিয়াছে। অত্যন্ত সাবধান লোকের ও সাবধানতায় ক্রটি থাকিয়া যায়। নীলকণ্ঠের হুস ছিল না যে, কতার বাক্স খুলিয়। উইল বাহির করিবার পরে বাক্সয় চাবি লাগানো হয় নাই। সেই বাক্সয় তাড়াবাধা মূল্যবান সমস্ত দলিল ছিল। সেই দলিলগুলির উপরেই এই হালদার-বংশের সম্পত্তির ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত। বনোয়ারি এই দলিলগুলির বিবরণ কিছুই জানে না, কিন্তু এগুলি যে অত্যস্ত কাজের এবং ইহাদের অভাবে মামলা-মকদ্দমায় পদে পদে ঠকিতে হইবে তাহা সে বোঝে । কাগজগুলি লইয়। সে নিজের একটা রুমালে জড়াইয় তাহাদের বাহিরের বাগানে চাপাতলার বাধানে চাতালে বসিয়া অনেকক্ষণ ধরিয়া ভাবিতে লাগিল । পরদিন শ্রাদ্ধ সম্বন্ধে আলোচনা করিবার জন্য নীলকণ্ঠ বনোয়ারির কাছে উপস্থিত হইল । নীলকণ্ঠের দেহের ভঙ্গি অত্যন্ত বিনম্র, কিন্তু তাহার মুখের মধ্যে এমন একটাকিছু ছিল, অথবা ছিল না, যাহা দেখিয়া অথবা কল্পনা করিয়া বনোয়ারির পিত্ত জলিয়া গেল। তাহার মনে হইল, নম্রতার দ্বারা নীলকণ্ঠ তাহাকে ব্যঙ্গ করিতেছে । নীলকণ্ঠ বলিল, “কর্তার শ্রাদ্ধ সম্বন্ধে—* বনোয়ারি তাহাকে কথা শেষ করিতে না দিয়াই বলিয়া উঠিল, “আমি তাহার কী জানি।” নীলকণ্ঠ কহিল, “সে কী কথা । আপনিই তো শ্রাদ্ধাধিকারী।” ‘মস্ত অধিকার । শ্রাদ্ধের অধিকার! সংসারে কেবল ঐটুকুতে আমার প্রয়োজন আছে — আমি আর কোনো কাজেরই না ’ বনোয়ারি গঞ্জিয়া উঠিল, “যাও, যাও, আমাকে বিরক্ত করিয়ো না ।” নীলকণ্ঠ গেল কিন্তু তাহার পিছন হইতে বনোয়ারির মনে হইল, সে হাসিতে হাসিতে গেল। বনোয়ারির মনে হইল, বাড়ির সমস্ত চাকরবাকর এই অশ্রুদ্ধিত, এই পরিত্যক্তকে লইয়া আপনাদের মধ্যে হাগিতামাশা করিতেছে । যে মানুষ বাড়ির অথচ বাড়ির লহে তাহার মতো ভাগ্য কর্তৃক পরিহলিত আর কে আছে। পথের ভিক্ষুক ও নখে । বনোয়ারি সেই দলিলের তাড়া লইয়া বাহির হইল। হালদার-পরিবারের প্রতিবেশী