পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

는C 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী দৃশুটি দেখে তুমি খুব খুশি হও নি। আমাকে খুশি না করলেও চলে আর তোমাদের খুশি না করলেই নয়, এই স্ববুদ্ধিটা আজ পর্যন্ত আমার ঘটে এল না । এদিকে তোমাদের রাগও যেমন বেড়ে উঠেছে বিন্দুর বয়স ও তেমনি বেড়ে চলেছে। সেই স্বাভাবিক ব্যাপারে তোমরা অস্বাভাবিক রকমে বিব্রত হয়ে উঠেছিলে । একটা কথা মনে করে আমি আশ্চর্ষ হই, তোমরা জোর করে কেন বিন্দুকে তোমাদের বাড়ি থেকে বিদায় করে দা ও নি। আমি বেশ বুঝি, তোমরা আমাকে মনে মনে ভয় কর । বিধাতা যে আমাকে বুদ্ধি দিয়েছিলেন, ভিতরে ভিতরে তার খাতির না করে তোমরা বাচ না । অবশেষে বিন্দুকে নিজের শক্তিতে বিদায় করতে না পেরে তোমরা প্রজাপতি দেবতার শরণাপন্ন হলে। বিন্দুর বর ঠিক হল । বড়ে জা বললেন, “বাঁচলুম, মা কালী আমাদের বংশের মুখ রক্ষা করলেন ।” বর কেমন তা জানি নে ; তোমাদের কাছে শুনলুম, সকল বিষয়েই ভালো । বিন্দু আমার পা জড়িয়ে ধরে র্কাদতে লাগল ; বললে, “দিদি, আমার আবার বিয়ে করা কেন ।” আমি তাকে অনেক বুঝিয়ে বললুম, বিন্দু, তুই ভয় করিস নে— শুনেছি, তোর বর ভালো।” বিন্দু বললে, “বর যদি ভালো হয়, আমার কী আছে যে আমাকে তার পছন্দ হবে ।” বরপক্ষেরা বিন্দুকে তো দেখতে আসবার নাম ও করলে না। বড়দিদি তাতে বড়ো নিশ্চিস্ত হলেন । কিন্তু, দিনরাত্রে বিন্দুর কান্না আর থামতে চায় না। সে তার কী কষ্ট, সে আমি জানি। বিন্দুর জন্যে আমি সংসারে অনেক লড়াই করেছি কিন্তু, ওর বিবাহ বন্ধ হোক, এ-কথা বলবার সাহস আমার হল না । কিসের জোরেই বা বলব। আমি যদি মারা যাই তো ওর কী দশা হবে । একে তো মেয়ে, তাতে কালো মেয়ে— কার ঘরে চলল, ওর কী দশা হবে, লে-কথা না ভাবাই ভালো । ভাবতে গেলে প্রাণ কেঁপে ওঠে । বিন্দু বললে, “দিদি, বিয়ের আর পাচদিন আছে, এর মধ্যে আমার মরণ হবে না কি ৷” আমি তাকে খুব ধমকে দিলুম, কিন্তু অন্তর্ধামি জানেন, যদি কোনো সহজতাবে বিদুর মৃত্যু হতে পারত তাহলে আমি আরাম বোধ করতুম।