পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨&br রবীন্দ্র-রচনাবলী ok. আমি যে তাকে বিয়ের আগের দিন আশা দিয়েছিলুম যে, তাকে শেষ পর্যন্ত ত্যাগ করব না। আমার ছোটো ভাই শরৎ কলকাতায় কলেজে পড়ছিল ; তোমরা জানই তো যত রকমের ভলণ্টিয়ারি করা, প্লেগের পাড়ার ইদুর মারা, দামোদরের বন্যায় ছোট, এতেই তার এত উৎসাহ ষে উপরি উপরি দুবার সে এফ. এ. পরীক্ষায় ফেল করেও কিছুমাত্র দমে যায় নি। তাকে আমি ডেকে বললুম, “বিন্দুর খবর মাতে আমি পাই তোকে সেই বন্দোবস্ত করে দিতে হবে, শরৎ । বিন্দু আমাকে চিঠি লিখতে সাহস করবে না, লিখলেও আমি পাব না।” এরকম কাজের চেয়ে যদি তাকে বলতুম, বিন্দুকে ডাকাতি করে আনতে কিম্বা তার পাগল স্বামীর মাথা ভেঙে দিতে তা হলে সে বেশি খুশি হত । শরতের সঙ্গে আলোচনা করছি এমন সময় তুমি ঘরে এসে বললে, “আবার কী হাঙ্গামা বাধিয়েছ ।” আমি বললুম, “সেই যা-সব গোড়ায় বাধিয়েছিলুম, তোমাদের ঘরে এসেছিলুম— কিন্তু সে তো তোমাদেরই কীতি।” তুমি জিজ্ঞাসা করলে, “বিন্দুকে আবার এনে কোথাও লুকিয়ে রেখেছ ?” আমি বললুম, “বিন্দু যদি আসত তা হলে নিশ্চয় এনে লুকিয়ে রাখতুম। কিন্তু সে আসবে না, তোমাদের ভয় নেই ।” শরংকে আমার কাছে দেখে তোমার সন্দেহ আরও বেড়ে উঠল। আমি জানতুম, শরং আমাদের বাড়ি যাতায়াত করে, এ তোমরা কিছুতেই পছন্দ করতে না। তোমাদের ভয় ছিল, ওর পরে পুলিলের দৃষ্টি আছে— কোন দিন ও কোন রাজনৈতিক মামলায় পড়বে, তখন তোমাদের স্ব দ্ধ জড়িয়ে ফেলবে । সেইজন্যে আমি ওকে ভাইফোট৷ পর্যন্ত লোক দিয়ে পাঠিয়ে দিতুম, ঘরে ডাকতুম না । তোমার কাছে শুনলুম, বিন্দু আবার পালিয়েছে, তাই তোমাদের বাড়িতে তার ভাস্কর খোজ করতে এসেছে । শুনে আমার বুকের মধ্যে শেল বিধল । হতভাগিনীর যে কী অসহ কষ্ট তা বুঝলুম অথচ কিছুই করবার রাস্তা নেই। শরৎ খবর নিতে ছুটল । সন্ধ্যার সময় ফিরে এসে আমাকে বললে, “বিন্দু তার খুড়ততে ভাইদের বাড়ি গিয়েছিল, কিন্তু তারা তুমুল রাগ করে তখনই আবার তাকে শ্বশুরবাড়ি পৌছে দিয়ে গেছে। এর জন্যে তাদের খেসারত এবং গাড়িভাড়া দণ্ড ধা ঘটেছে, তার ঝাজ এখনো তাদের মন থেকে মরে নি। তোমাদের খুড়িমা শ্ৰীক্ষেত্রে তীর্থ করতে যাবেন বলে তোমাদের বাড়িতে এসে উঠেছেন। আমি তোমাদের বললুম, “আমিও যাব।”