পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ २br> বলেছে, আমার শরীর দুর্বল, এখন যাতে আমার মনে কোনো— কিন্তু, আমি তোমাকে নিশ্চয় বলছি, মাসি, আজ রাত্রে তার সঙ্গে দুটি কথা কয়ে নিতে পারলে আমার মন খুব শাস্ত হয়ে যাবে— তাহলে বোধ হয় আর ঘুমোবার ওষুধ দিতে হবে না। আমার মন তাকে কিছু বলতে চাচ্ছে ব’লেই, এই দু রাত্রি আমার ঘুম হয় নি। মালি, তুমি অমন করে কেঁদো না। আমি বেশ আছি, আমার মন আজ যেমন ভরে উঠেছে, অামার জীবনে এমন আর কখনোই হয় নি। সেইজন্যই আমি মণিকে ডাকছি। মনে হচ্ছে, আজ যেন আমার ভর হৃদয়টি তার হাতে দিয়ে যেতে পারব । তাকে অনেক দিন অনেক কথা বলতে চেয়েছিলুম, বলতে পারি নি, কিন্তু আর এক মুহূর্ত দেরি করা নয়, তাকে এখনি ডেকে দাও— এর পরে আর সময় পাব না। না, মালি, তোমার ঐ কান্না আমি সইতে পারি নে। এতদিন তো শাস্ত ছিলে, আজ কেন তোমার এমন হল ।” "ওরে যতীন, ভেবেছিলুম, আমার সব কারা ফুরিয়ে গেছে— কিন্তু দেখতে পাচ্ছি, এখনো বাকি আছে, আজ আর পারছি নে ৷” “মণিকে ডেকে দাও— তাকে ব’লে দেব কালকের রাতের জন্যে যেন—” “ঘাচ্ছি, বাবা। শঙ্কু দরজার কাছে রইল, যদি কিছু দরকার হয় ওকে ডেকে।” মালি মণির শোবার ঘরে গিয়া মেজের উপর বসিয়া ডাকিতে লাগিলেন, "ওরে, আয়— একবার আয়— আয় রে রাক্ষসী, যে তোকে তার সব দিয়েছে তার শেষ কথাটি রাখ– সে মরতে বসেছে, তাকে আর মারিস নে ৷” যতীন পায়ের শব্দে চমকিয়া উঠিয়া কছিল, “মণি!” “ন, আমি শম্ভু । আমাকে ডাকছিলেন ?” *একবার তোর বউঠাকরুনকে ডেকে দে ।” "কাকে ?”

  • বউঠাকরুনকে ৷” "তিনি তো এখনো ফেরেন নি ।” “কোথায় গেছেন ?”

“সীতারামপুরে ।” “আজ গেছেন ?” *না, আজ তিন দিন হল গেছেন।” ক্ষণকালের জন্ত যতীনের সর্বাঙ্গ ঝিমঝিম্ করিয়া আসিল— সে চোখে অন্ধকার