পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ "උ ( ‘දෘ তোমরা মনে করিতেছ, আমি বিবাহের আশা করি ? না, কোনোকালেই না। আমার মনে আছে, কেবল সেই একরান্ত্রির অজানা কণ্ঠের মধুর মুরের আশা— জায়গা আছে । নিশ্চয়ই আছে। নইলে দাড়াব কোথায় ? তাই বৎসরের পর বৎসর যায়— আমি এইখানেই আছি। দেখা হয়, সেই কণ্ঠ শুনি, যখন সুবিধা পাই কিছু তার কাজ করিয়া দিই– আর মন বলে, এই তো জায়গা পাইয়াছি। ওগো অপরিচিত, তোমার পরিচয়ের শেষ হইল না, শেষ হইবে না ; কিন্তু ভাগ্য আমার ভালো, এই তো আমি জায়গা পাইয়াছি । কাতিক, ১৩২১ তপস্বিনী বৈশাখ প্রায় শেষ হইয়া আসিল । প্রথমরাত্রে গুমট গেছে, বাশগাছের পাতাট পর্যন্ত নড়ে না, আকাশের তারাগুলো যেন মাথা-ধরার বেদনার মতো দব দব, করিতেছে। রাত্রি তিনটের সময় ঝিবুঝির করিয়া একটুখানি বাতাস উঠিল। ষোড়শী শূন্ত মেঝের উপর খোলা জানালার নিচে শুইয়া আছে, একটা কাপড়ে-মোড়া টিনের বাক্স তার মাথার বালিশ। বেশ বোঝা যায়, খুব উৎসাহের সঙ্গে লে কৃচ্ছসাধন করিতেছে । প্রতিদিন ভোর চারটের সময় উঠিয়া স্নান সারিয়া ষোড়শী ঠাকুরঘরে গিয়া বলে । আহ্লিক করিতে বেলা হইয়া যায় । তার পরে বিদ্যারত্বমশায় আসেন ; সেই ঘরে বসিয়াই তার কাছে সে গীতা পড়ে। সংস্কৃত সে কিছু কিছু শিথিয়াছে। শঙ্করের বেদান্তভান্য এবং পাতঞ্জলদর্শন মূল গ্রন্থ হইতে পড়িবে, এই তার পণ । বয়স তার তেইশ হুইবে । ঘরকন্নার কাজ হইতে ষোড়শী আনেকটা তফাত থাকে— সেটা যে কেন সম্ভব হইল তার কারণটা লইয়াই এই গল্প। নামের সঙ্গে মাখনবাবুর স্বভাবের কোনো সাদৃপ্ত ছিল না। তার মন গলানো বড়ো শক্ত ছিল । তিনি ঠিক করিয়াছিলেন, যতদিন তার ছেলে বরদা অন্তত বি. এ. পাশ না করে ততদিন তার বউমার কাছ হইতে সে দুরে থাকিবে। অথচ পড়াশুনাট বরদার ঠিক ধাতে মেলে না, সে মানুষটি শৌখিন। জীবননিকুঞ্জের মধুসঞ্চয়ের সম্বন্ধে মৌমাছির সঙ্গে তার মেজাজটা মেলে, কিন্তু মৌচাকের পালায় ষে পরিশ্রমের দরকার সেটা তার একেবারেই সয় না । বড়ো আশা করিয়াছিল, বিবাহের পর হইতে গোফে তা দিয়া সে বেশ একটু আরামে থাকিবে, এবং সেই সঙ্গে সঙ্গে