পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

も〉8 রবীন্দ্র-রচনাবলী আয়োজন। সকালে উঠিয়াই ইহারই জন্য তার সেবার কাজ আরম্ভ হয়— এর আগে রান্নাঘরের কাজ সে কখনো করে নাই, এখন এই কাজেই তার বিলাস । সমস্তক্ষণই মনের মধ্যে তার প্রত্যাশার প্রদীপ জালানো থাকে। রাত্রে শুইতে যাইবার আগে, ‘কাল হয়তে আমার সেই অতিথি আসিয়া পৌছিবে এই চিন্তাটিই তার দিনের শেষ চিস্তা। এই যেমন সন্ধান চলিতেছে, অমনি সেই সঙ্গে যেমন করিয়া বিধাতা তিলোত্তমাকে গড়িয়াছিলেন তেমনি করিয়া ষোড়শী নানা সন্ন্যাসীর শ্রেষ্ঠ উপকরণ মিলাইয়। বরদার মূর্তিটিকে নিজের মনের মধ্যে উজ্জল করিয়া তুলিতেছিল। পবিত্র তার সত্তা, তেজঃপুঞ্জ তার দেহ, গভীর তার জ্ঞান, অতি কঠোর তার ব্রত । এই সন্ন্যাসীকে অবজ্ঞা করে এমন সাধ্য কার । সকল সন্ন্যাসীর মধ্যে এই এক সন্ন্যাসীরই তো পুজা চলিতেছে। স্বয়ং তার শ্বশুরও ধে এই পূজার প্রধান পূজারি, ষোড়শীর কাছে এর চেয়ে গৌরবের কথ। আর কিছু ছিল না । কিন্তু, সন্ন্যাসী প্রতিদিনই তো আসে না । সেই ফাকগুলো বড়ো অসহ্য । ক্রমে সে ফাক ও ভরিল । ষোড়শী ঘরে থাকিয়াই সন্ন্যাসের সাধনায় লাগিয়া গেল । সে মেঝের উপর কম্বল পাতিয়া শোয়, এক বেলা যা খায় তার মধ্যে ফলমূলই বেশি। গায়ে তার গেরুয়া রঙের তশর, কিন্তু সাধব্যের লক্ষণ ফুটাইয়া তুলিবার জন্য চওড়া তার লাল পাড়, এবং কল্যাণীর সিথির অর্ধেকটা জুড়িয়া মোটা একটা সিন্দুরের রেখা। ইহার উপরে শ্বশুরকে বলিয়া সংস্কৃত পড়া শুরু করিল। মুগ্ধবোধ মুখস্থ করিতে তার অধিক দিন লাগিল না ; পণ্ডিতমশায় বলিলেন, “একেই বলে পূর্বজন্মাfজত বিদ্যা।” পবিত্রতায় সে যতই অগ্রসর হইবে সন্ন্যাসীর সঙ্গে তার অন্তরেরর মিলন ততই পূর্ণ হইতে থাকিবে, এই সে মনে মনে ঠিক করিয়াছিল। বাহিরের লোকে সকলেই ধন্য-ধন্ত করিতে লাগিল ; এই সন্ন্যাসী সাধুর সাধ্বী স্ত্রীর পায়ের ধুলা ও আশীৰ্বাদ লইবার লোকের ভিড় বাড়িতে থাকিল— এমন-কি, স্বয়ং পিসিও তার কাছে ভয়ে সন্ত্রমে চুপ করিয়া থাকেন। কিন্তু, ষোড়শী যে নিজের মন জানিত । তার মনের রঙ তো ভার গায়ের তশরের রঙের মতো সম্পূর্ণ গেরুয়া হইয়া উঠিতে পারে নাই । আজ ভোর বেলাটাতে ঐ যে ঝিবুঝির করিয়া ঠাগু হাওয়া দিতেছিল সেটা যেন তার সমস্ত দেহমনের উপর কোন একজনের কানে কানে কথার মতো আসিয়া পৌছিল । উঠিতে আর ইচ্ছা করিতেছিল না। জোর করিয়া উঠিল, জোর করিয়া কাজ করিতে গেল। ইচ্ছা করিতেছিল, জানালার কাছে বসিয়া তার মনের দূর দিগম্ভ হইতে যে বাশির স্বর আসিতেছে সেইটে চুপ করিয়া শোনে। এক-একদিন তার সমস্ত মন যেন অতিচেতন