পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లిSty রবীন্দ্র-রচনাবলী দিয়েছে। জিনিস-পত্র বাড়ি-ঘর জন্তু-মানুষ সকলের পরেই সিতাংশুর এই সহজ প্রভাব ভারি একটি শ্ৰী বিস্তার করত। এই জিনিসটি অনির্বচনীয়, আমি একে নিতান্ত দুলভ না মনে করে থাকতে পারতুম না। আমি মনে করতুম, পৃথিবীতে কোনো কিছু প্রার্থন করা এ লোকটির পক্ষে অনাবশ্যক, সবই আপনি এর কাছে এসে পড়বে এ ইচ্ছা করে যেখানে গিয়ে বসবে সেইখানেই এর আসন পাতা । তাই যখন একে একে আমার দ্বৈতগুলির অনেকেই পয়ল-নম্বরে টেনিস খেলতে, কন্সট বাজাতে লাগল, তখন স্থানত্যাগের দ্বারা এই লুদ্ধদের উদ্ধার করা ছাড়া আর কোনো উপায় খুঁজে পেলুম না। দালাল এসে খবর দিলে, মনের মতো অন্ত বালা বরানগর-কাশীপুরের কাছাকাছি এক জায়গায় পাওয়া যাবে। আমি তাতে রাজি। সকাল তখন সাড়ে ন’টা । স্ত্রীকে প্রস্তুত হতে বলতে গেলুম। তাকে ভাড়ারঘরেও পেলুম না, রান্নাঘরেও না। দেখি, শোবার ঘরে জানলার গরাদের উপর মাথা রেখে চুপ করে বসে আছেন । আমাকে দেখেই উঠে পড়লেন । আমি বললুম, “পশু ই নতুন বাসায় যাওয়া যাবে I* তিনি বললেন, “আর দিন পনেরো সবুর করে।” জিজ্ঞাসা করলুম, “কেন।” অনিল বললেন, “সরোজের পরীক্ষার ফল শীঘ্ৰ বেরোবে— তার জন্য মনটা উদবিগ্ন আছে, এ কয়দিন আর নড়াচড়া করতে ভালো লাগছে না।” অন্যান্য অসংখ্য বিষয়ের মধ্যে এই একটি বিষয় আছে যা নিয়ে আমার স্ত্রীর সঙ্গে আমি কখনো আলোচনা করি নে। স্বতরাং আপাতত কিছুদিন বাড়িবদল মুলতবি রইল। ইতিমধ্যে খবর পেলুম, পিতাংশু শীঘ্রই দক্ষিণ ভারতে বেড়াতে বেরোবে, স্বতরাং দুই-নম্বরের উপর থেকে মস্ত ছায়াটা সরে যাবে। অদৃষ্ট নাট্যের পঞ্চমাঙ্কের শেষ দিকটা হঠাৎ দৃষ্ট হয়ে ওঠে। কাল আমার স্ত্রী তার বাপের বাড়ি গিয়েছিলেন ; আজ ফিরে এসে তার ঘরে দরজা বন্ধ করলেন । তিনি জানেন, আজ রাত্রে আমাদের দ্বৈতদলের পূর্ণিমার ভোজ । তাই নিয়ে তার সঙ্গে পরামর্শ করবার অভিপ্রায়ে দরজায় ঘা দিলুম। প্রথমে সাড়া পাওয়া গেল না। ডাক দিলুম, “অন্থ " খানিক বাদে অনিল এসে দরজা খুলে দিলে। আমি জিজ্ঞাসা করলুম, “আজ রাত্রে রান্নার জোগাড় সব ঠিক আছে তো ?” সে কোনো জবাব না দিয়ে মাথা হেলিয়ে জানালে যে, অাছে। আমি বললুম “তোমার হাতের তৈরি মাছের কচুরি আর বিলাতি আমড়ার চাটুলি ওদের খুব ভালো লাগে, সেটা ভুলে না।” এই বলে বাইরে এসেই দেখি কানাইলাল বসে আছে।