পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ම89- রবীন্দ্র-রচনাবলী না তার মুখের দিকে চাইলুম, না তাকে কোনো কথা বললুম। সে বললে, “আমার নাম দীপালি ।” গলাটি ভারি মিষ্টি । সাহস করে মুখের দিকে চেয়ে দেখলুম, সে মুখ বুদ্ধিতে কোমলতাতে মাখানো। মাথায় ঘোমটা নেই– সাদা দিশি কাপড়, এখনকার ফেশানে পরা। কী বলি ভাবছি, এমন সময় সে বললে, “আমাকে বিবাহ দেবার জন্তে আপনি কোনো চেষ্টা করবেন না।” আর যাই হোক, দীপালির মুখে এমন আপত্তি আমি প্রত্যাশাই করি নি। আমি ভেবে রেখেছিলুম, বিবাহের প্রস্তাবে তার দেহ মন প্রাণ কৃতজ্ঞতায় ভরে উঠেছে। জিজ্ঞাসা করলুম “জানা অজানা কোনো পাত্রকেই তুমি বিবাহ করবে না ?” সে বললে, “না, কোনো পাত্রকেই না।” যদিচ মনস্তত্ত্বের চেয়ে বস্তুতত্ত্বেই আমার অভিজ্ঞতা বেশি– বিশেষত নারীচিত্ত আমার কাছে বাংলা বানানের চেয়ে কঠিন, তবু কথাটার সাদা অর্থ আমার কাছে সত্য অর্থ ব’লে মনে হল না। আমি বললুম, “যে-পাত্র আমি তোমার জন্যে বেছেছি সে অবজ্ঞা করবার যোগ্য নয় ।” দীপালি বললে, “আমি তাকে অবজ্ঞা করি নে, কিন্তু আমি বিবাহ করব না।” আমি বললুম, “সে লোকটিও তোমাকে মনের সঙ্গে শ্রদ্ধ করে।” *কিন্তু, না, আমাকে বিবাহ করতে বলবেন না।” *আচ্ছা, বলব না, কিন্তু আমি কি তোমাদের কোনো কাজে লাগতে পারি নে ৷” “আমাকে যদি কোনো মেয়ে-ইস্কুলে পড়াবার কাজ জুটিয়ে দিয়ে এখান থেকে কলকাতায় নিয়ে যান তা হলে ভারি উপকার হয় ।” বললুম, “কাজ আছে, জুটিয়ে দিতে পারব।” এটা সম্পূর্ণ সত্য কথা নয়। মেয়ে-ইস্কুলের খবর আমি কী জানি । কিন্তু, মেয়ে-ইস্কুল স্থাপন করতে তো দোষ নেই । + দীপালি বললে, “আপনি আমাদের বাড়ি গিয়ে একবার মায়ের সঙ্গে এ কথার আলোচনা করে দেখবেন ?” আমি বললুম, “আমি কাল সকালেই যাব।” দীপালি চলে গেল। কাগজ-পড়া আমার বন্ধ হল। ছাতের উপর বেরিয়ে এসে চৌকিতে বসলুম। তারাগুলোকে জিজ্ঞাসা করলুম, কোটি কোটি যোজন দূরে থেকে তোমরা কি সত্যই মামুষের জীবনের সমস্ত কর্মসূত্র ও লম্বন্ধস্বত্র নিঃশব্দে বসে বসে বুনছ ?