পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী و سواها মোকাবিলায় রহস্তালাপ হতে পারল । নাহয় ডুবেই মরতেম— সেটা কি এর চেয়ে বড়ো কথা । রুদ্রবীণার ওস্তাজি তার এই রুদ্রবীণার শাক্রেদকে ফেনিল তরঙ্গতাওবের মধ্যে দুটো-একটা চক্র-হাওয়ার দ্রুত-তালের তান শুনিয়ে দিলেন। সেইখানে বলতে পারলেম, ‘তুমি আমার আপনার । অমৃতের ছটি অর্থ— একটি যার মৃত্যু নেই, এবং যা পরম রস । আনন্দ যে রূপ ধরেছে এই তো হল রস। অমৃতও যদি সেই রসই হয় তবে রসের কথা পুনরুক্ত হয় যাত্র । কাজেই এখানে বলব অমৃত মানে যা মৃত্যুহীন— অর্থাৎ আনন্দ যেখানে রূপ ধরেছে সেইখানেই সেই প্রকাশ মৃত্যুকে অতিক্রম করেছে। সবাই দেখাচ্ছে কালের ভয় । কালের রাজত্বে থেকেও কালের সঙ্গে যার অসহযোগ সে কোথায় । এইবারে আমাদের কথা। কাব্য যেটি ছনে গাথা হয়, রূপদক্ষ যে-রূপ রচনা করেন, সেটি যদি আনন্দের প্রকাশ হয় তবে সে মৃত্যুজয়ী – এই ‘রূপদক্ষ কথাটি আমার নূতন পাওয়া। ইন্‌সক্রিপশন অর্থাং একটা প্রাচীনলিপিতে পাওয়া গেছে, আর্টিস্টের একটা চমৎকার প্রতিশব্দ – কাব্যের বা চিত্রের তো সমাপ্তিতে সমাপ্তি নেই। মেঘদূত শোনা হয়ে গেল, ছবি দেখে বাড়ি ফিরে এলেম, কিন্তু মনের মধ্যে একটা অবসাদকে তো নিয়ে এলেম না । গান যখন সমে এসে থামল তখন ভারি অনন্দে মাথা ঝাকা দিলেম । সম মানে তো থামা, তাতে আননা কেন— তার কারণ হচ্ছে, আনন্দরূপ থামাতে থামে না। কিন্তু, টাকাটা যেই ফুরিয়ে গেল তখন তো সমে মাথ। নেড়ে বলি নে— 'আঃ' । গান থামল— তবু সে শূন্যের মতো অন্ধকারের মতো থামল না কেন । তার কারণ, গানের মধ্যে একটি তত্ত্ব আছে যা সমগ্র বিশ্বের আত্মার মধ্যে আছে— কাজেই সে সেই ওঁকে আশ্রয় করে থেকে যায় ; তার জন্তে কোনো গর্ত কোথা ও নেই। এই গান আমি শুনি বা নাই শুনি, তাকে প্রত্যক্ষত কেউ নিল বা নাই নিল, তাতে কিছুই আসে-যায় না। কত অমূল্যধন চিত্রে কাব্যে হারিয়ে গেছে কিন্তু সেটা একটা বাহ ঘটনা, একটা আকস্মিক ব্যাপার । আসল কথা হচ্ছে এই যে, তারা আনন্দের ঐশ্বর্ধকে প্রকাশ করেছে, প্রয়োজনের দৈন্তকে করে নি। সেই দৈন্তের রূপটা যদি দেখতে চাও তৰে পাটকলের কারখানায় গিয়ে ঢোকো যেখানে গরিব চাবার রক্তকে ঘূর্ণীচাকার পাক দিয়ে বহুশতকরা হারের মুনাফায় পরিণত করা হচ্ছে । গঙ্গাতীরের বটছায়াসমাশ্রিত যেদেউলটিকে লোপ ক’রে দিয়ে ঐ প্রকাগু-ই-করা কারখানা কালো ধোয়া উদগীর্ণ করছে সেই লুপ্ত দেউলের চেয়েও ঐ কারখানা-ঘর মিথ্যা । কেননা, আনন্দলোকে ওর স্থান নেই। বসন্তে ফুলের মুকুল রাশি রাশি ঝরে যায় ; ভয় নেই, কেননা ক্ষয় নেই। বলম্বের