পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

●送)● রবীন্দ্র-রচনাবলী বার বার পুনরাবৃত্তি, তার স্বরের মধ্যে কোথাও মুরের নম্রতা নেই, তরুহীন মাটির মধ্যে ছায়াহীন মধ্যাহ্নরৌদ্রের মতো। যত ঝেণক সমস্তই আওয়াজের প্রখরতার উপর । সংগীতের আয়তনটাকেই বড়ো ক’রে তোলবার দিকে বলবান প্রয়াস । অর্থাৎ, সীমা এখানে আপনাকেই বড়ো করে দেখাতে চাচ্ছে— তারই পরে আমাদের মন না দিয়ে উপায় নেই। তার চরমকে সে আপনার পালোয়ানির দ্বারা ঢেকে ফেলছে । সীমা-আপন সংষমের দ্বারা আপনাকে আড়াল ক’রে সত্যকে প্রকাশ করে । সেইজন্তে সকল কলাস্থষ্টিতেই সরলতার সংযম একটা প্রধান বস্তু। সংযমই হচ্ছে সীমার তর্জনী দিয়ে অসীমকে নির্দেশ করা। কোনো জিনিসের অংশগুলিই যখন সমগ্রের তুলনায় বড়ো হয়ে ওঠে তখনই তাকে বলে অসংযম। সেটাই হল একের বিরুদ্ধে অনেকের বিদ্রোহ । সেই বাহ অনেকের পরিমাণ যতই বড়ো হতে থাকে অন্তর্যামী এক ততই আচ্ছন্ন হয়। যিশু বলেছেন, ‘বরঞ্চ উট ছুঁচের ছিদ্র দিয়ে গলতে পারে কিন্তু ধনের আতিশয্য নিয়ে কোনো মানুষ দিব্যধামে প্রবেশ করতে পারে না।’ তার মানে হচ্ছে, অতিমাত্রায় ধন জিনিসটা মানুষের বাহ অসংযম । উপকরণের বাহুল্য দ্বারা মানুষ আত্মার স্বসম্পূর্ণ ঐক্য-উপলব্ধি থেকে বঞ্চিত হয়। তার অধিকাংশ চিন্তা চেষ্টা খণ্ডিত ভাবে বহুল সঞ্চয়ের মধ্যে বাহিরে বিক্ষিপ্ত হতে থাকে। ষে এক সম্পূর্ণ, যে-এক সত্য, যে-এক অসীম, আপনার মধ্যে তার প্রকাশকে ধনী বহু৷বচিত্রের মধ্যে ছড়াছড়ি ক’রে নষ্ট করে । জীবন-বাশিতে সেই তো খেলো স্বর বাজায়— তানের অদ্ভুত কসরত, দুন-চৌদ্ধনের মাতামাতি, তারস্বরের অসহ দাম্ভিকতা । এতেই অরসিকের চিত্ত বিস্ময়ে অভিভূত হয় । রূপের সংযমের মধ্যে যারা সত্যের পূর্ণরূপ দেখতে চায় তারা রূপের জঙ্গলের প্রবলতার দস্থ্যবৃত্তি দেখে পালাবার পথ খুঁজে বেড়ায় । সেখানে রূপ হাক দিয়ে দিয়ে বলে, “আমাকে দেখো । কেল দেখব । জগতে রূপের সিংহাসনে অরূপকে দেখব বলেই এসেছি। কিন্তু, জগতে বিজ্ঞান যেমন অবস্তুকে খুঁজে বের করে বলছে 'এই তো সত্য’, রূপজগতে কলা তেমনি অরূপ রসকে দেখিয়ে বলছে ‘ঐ তো জামার সত্য । যখন দেখলুম সেই সত্য তখন রূপ আর আমাকে লোভ দেখাতে পারে না, তখন কসরতকে বলি ধিক্ । পেটুক মানুষের যখন পেটের ক্ষুধা ঘোচে তখনও তার মনের ক্ষুৰ ঘোচে না। মেয়ের খুশি হয়ে তার পাতে যত পারে পিটেপুলি চাপাতে থাকে। অবশেষে একদিন অম্লশূলরোগীর সেবার জন্ত সেই মেয়েদের পরেই ডাক পড়ে। সাহিত্যকলার ক্ষেত্রে যারা পেটুক তারাই রূপের লোভে অতিভোগের সন্ধান করে— তাদের মুক্তি নেই। কারণ, রূপের মধ্যে সত্যের আবির্ভাব হলে সত্য সেই রূপ থেকেই মুক্তি দেয়। ধারা