পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○な切* রবীন্দ্র-রচনাবলী সভ্যতার পরে স্বষ্টিকর্তার লজ্জা দেখতে পাচ্ছ না কি। ঐ বেহায় যে আজ দেশে বিদেশে আপন দল জমিয়ে ঢাক বাজিয়ে বেড়াচ্ছে । নিউইয়র্ক থেকে টোকিও পর্যন্ত ঘাটে ঘাটে, ঘাটিতে ঘাটিতে, তার উদ্ধত যন্ত্রগুলো উংকট শৃঙ্গধবনি দ্বারা স্বাক্টর মঙ্গলশঙ্খধ্বনিকে ব্যঙ্গ করছে। উলঙ্গশক্তির এই দৃপ্ত আত্মম্ভরিতা আপন কলুষকুংলিত মুষ্টিতে অমৃতলোকের সম্মান লুট করে নিতে চায়। মানবসংসারে আজকের দিনের সব-চেয়ে মহং দুঃখ, মহৎ অপমান এই নিয়েই । মানুষের শ্রেষ্ঠ পরিচয় হচ্ছে মাহুষ স্বষ্টিকর্তা । আজকের দিনের সভ্যতা মানুষকে মজুর করছে, মিস্ত্রি করছে, মহাজন করছে, লোভ দেখিয়ে স্থষ্টিকর্তাকে খাটো করে দিচ্ছে । মানুষ নির্মাণ করে ব্যবসায়ের প্রয়োজনে, স্থষ্টি করে আত্মার প্রেরণায় । ব্যবসায়ের প্রয়োজন যখন অত্যন্ত বেশি হয়ে উঠতে থাকে তখন আত্মার বাণী নিরস্ত হয়ে যায় । ধনী তখন দিব্যধামের পথের চিহ্ন লোপ করে দেয়, সকল পথকেই হাটের দিকে নিয়ে আসে । কোনখানে মানুষের শেষ কথা । মানুষের সঙ্গে মাহুষের যে সম্বন্ধ বাহ প্রকৃতির তথ্য-রাজ্যের সীমা অতিক্রম ক’রে আত্মার চরম সম্বন্ধে নিয়ে যায়—যা সৌন্দর্ষের সম্বন্ধ, কল্যাণের সম্বন্ধ, প্রেমের সম্বন্ধ, তারই মধ্যে। সেইখানেই মানুষের স্বষ্টির রাজ্য। সেখানে প্রত্যেক মানুষ আপন অসীম গৌরব লাভ করে, সেখানে প্রত্যেক মানুষের জন্তে সমগ্র মানুষের তপস্যা । যেখানে মহাসাধকেরা সাধন করছেন প্রত্যেক মামুষের জন্তে, মহাবীরেরা প্রাণ দিয়েছেন প্রত্যেক মামুষের জন্তে, মহাজ্ঞানীরা জ্ঞান এনেছেন প্রত্যেক মানুষের জন্তে । যেখানে একজন ধনী দশ জনকে শোষণ করছে, যেখানে হাজার হাজার মানুষের স্বাতন্ত্র্যকে হরণ করে একজন শক্তিশালী হচ্ছে, যেখানে বহু লোকের ক্ষুধার অল্প একজন লোকের ভোগবাহুল্যে পরিণত হচ্ছে, সেখানে মাস্থবের সত্যরূপ, শাস্তিরূপ আপন স্বনার স্বষ্টির মধ্যে প্রকাশ পেল না । যে মানুষ লোভী চিরদিনই সে নির্লজ্জ ; ষে লোক শক্তির অভিমানী, সত্যযুগেও নিখিলের সঙ্গে আপন অসামঞ্জস্ত নিয়েই সে দম্ভ করেছে। কিন্তু সেকালে তার লজ্জাহীনতাকে, তার দস্তকে তিরস্কৃত করবার লোক ছিল । মানুষ সেদিন লোভীকে, শক্তিশালীকে, এ কথা বলতে কুষ্ঠিত হয় নি— ‘পৃথিবীতে স্থলরের বাণী এসেছে, তুমি তাতে বেমুর লাগিয়ে না ; জগতে আনন্দলক্ষ্মীর যে সিংহাসন লে ষে শতদল পদ্ম, মত্ত করার মতো তাকে দলতে যেয়ে না।’ এই কথাই বলছে কবির কাব্য, চিত্রীর চিত্রকলা । আজ বিবাহের দিনে বাশি বলছে, বরবধূ, তোমরা যে সত্য এই কথাটাই অন্য সকল কথার চেয়ে বড়ো করে আপনাদের মধ্যে প্রকাশ করে। লাখ ছ-লাখ টাকা ব্যান্ধে