পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীক্স-রচনাবলী , جي g و) e 8 রোপীয় যুদ্ধের সময় সেই যুদ্ধের চঞ্চলত কাব্যে আন্দোলিত হয়েছিল। সেই সাময়িক আন্দোলনের অনেকটাই সাহিত্যের নিত্যবিষয় হতেই পারে না ; দেখতে দেখতে তা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ইংলওে পিউরিটান যুগের পরে যখন চরিত্রশৈথিল্যের সময় এল তখন সেখানকার সাহিত্যস্বৰ্ষ তারই কলঙ্কলেখায় আচ্ছন্ন হয়েছিল। কিন্তু, সাহিত্যের সৌরকলঙ্ক নিত্যকালের নয়। যথেষ্ট পরিমাণে সেই কলঙ্ক থাকলেও প্রতি মুহূর্তে স্বর্ষের জ্যোতিস্বরূপ তার প্রতিবাদ করে, স্বর্ষের সত্তায় তার অবস্থিতিসত্ত্বেও তার সার্থকতা নেই। সার্থকতা হচ্ছে আলোতে । মধ্যযুগে এক সময়ে যুরোপে শাস্ত্রশাসনের খুব জোর ছিল। তখন বিজ্ঞানকে সেই শাসন অভিভূত করেছে। স্বর্ষের চারি দিকে পৃথিবী ঘোরে, এ কথা বলতে গেলে মুখ চেপে ধরেছিল ; ভুলেছিল বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের একাধিপত্য, তার সিংহাসন ধর্মের রাজত্বসীমার বাইরে । আজকের দিনে তার বিপরীত হল। বিজ্ঞান প্রবল হয়ে উঠে কোথাও আপনার সীমা মানতে চায় না। তার প্রভাব মানবমনের সকল বিভাগেই আপন পেয়াদা পাঠিয়েছে। নূতন ক্ষমতার তকমা প’রে কোথাও সে অনধিকার প্রবেশ করতে কুষ্ঠিত হয় না। বিজ্ঞান পদার্থটা ব্যক্তিস্বভাববর্জিত ; তার ধর্মই হচ্ছে সত্য সম্বন্ধে অপক্ষপাত কৌতুহল। এই কৌতুহলের বেড়াজাল এখনকার সাহিত্যকে ও ক্রমে ক্রমে ঘিরে ধরছে। অথচ সাহিত্যের বিশষত্বই হচ্ছে তার পক্ষপাতধর্ম ; সাহিত্যের বাণী স্বয়ম্বর। বিজ্ঞানের নির্বিচার কৌতুহল সাহিত্যের সেই বরণ ক’রে নেবার স্বভাবকে পরাস্ত করতে উষ্ঠত। আজকালকার যুরোপীয় সাহিত্যে যৌনমিলনের দৈহিকতা নিয়ে খুব যে একটা উপদ্রব চলছে সেটার প্রধান প্রেরণা বৈজ্ঞানিক কৌতুহল, রেসটোরেশনযুগে সেটা ছিল লালসা । কিন্তু, সেই যুগের লালসার উত্তেজনাও যেমন সাহিত্যের রাজটিক চিরদিনের মতো পায় নি, আজকালকার দিনের বৈজ্ঞানিক কৌতুহলের ঔৎসুক্যও সাহিত্যে চিরকাল টিকতে পারে না। একদিন আমাদের দেশে নাগরিকতা যখন খুব তপ্ত ছিল তখন ভারতচন্দ্রের বিদ্যাস্কন্দরের যথেষ্ট আদর দেখেছি। মদনমোহন তর্কীলংকায়ের মধ্যেও সে বাজ ছিল। তখনকার দিনের নাগরিক-সাহিত্যে এ জিনিসটার ছড়াছড়ি দেখা গেছে। যারা এই নেশায় বুদ হয়ে ছিল তারা মনে করতে পারত না যে, সেদিনকার সাহিত্যের রসাকাঠের এই ধোয়াটাই প্রধান ও স্থায়ী জিনিস নয়, তার আগুনের শিখাটাই আসল । কিন্তু আজ দেখা গেল, সেদিনকার সাহিত্যের গায়ে যে কাদার ছাপ পড়েছিল সেটা তার চামড়ার রঙ নয়, কালস্রোতের ধারায় আজ তার চিহ্ন নেই। মনে তো আছে, যেদিন