পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্যের পথে 8&S হতে তা লুপ্ত হয়ে যায় ; ক্ষণিক ব্যবহারের সংবাদৰছনে তার সমাপ্তি। আর-একটাতে প্রকাশের পরিণাম তার নিজের মধ্যেই । সে দৈনিক আণ্ডপ্রয়োজনের ক্ষুদ্র সীমায় নিঃশেষিত হতে হতে মিলিয়ে যায় না। সে শাল-ভমালেরই মতো ; তার কাছ থেকে দ্রুত ফসল ফলিয়ে নিয়ে তাকে বরখাস্ত করা হয় না। অর্থাৎ, বিচিত্র ফুলে ফলে পল্লবে শাখায় কাণ্ডে, ভাবের এবং রূপের সমবায়ে, সমগ্রতায় সে আপনার অস্তিত্বেরই চরম গৌরব ঘোষণা করতে থাকে স্থায়ী কালের বৃহৎ ক্ষেত্রে। একেই আমরা ব’লে থাকি সাহিত্য । ভাষার যোগে আমরা পরস্পরকে তথ্যগত সংবাদ জানাচ্ছি, তা ছাড়া জানাচ্ছি ব্যক্তিগত মনোভাব । ভালো লাগছে, মন্দ লাগছে, রাগ করছি, ভালোবাসছি, এটা যথাস্থানে ব্যক্ত না করে থাকতে পারি নে। মূক পশুপাখিরও আছে অপরিণত ভাষা ; তাতে কিছু আছে ধ্বনি, কিছু আছে ভঙ্গি ; এই ভাষায় তারা পরস্পরের কাছে কিছু খবরও জানায়, কিছু ভাৰও জানায়। মানুষের ভাষা তার এই প্রয়োগসীমা অনেক দূরে ছাড়িয়ে গেছে। সদ্ধান ও যুক্তির জোরে তথ্যগত সংবাদ পরিণত হয়েছে বিজ্ঞানে । হব-মাত্র তার প্রাত্যহিক ব্যক্তিগত বন্ধন ঘুচে গেল । যে জগৎটা “আমি আছি’ এইমাত্র ব’লে আপনাকে জানান দিয়েছে, মানুষ তাকে নিয়ে বিরাট জ্ঞানের জগৎ রচনা করলে । বিশ্বজগতে মাছুষের যে-যোগটা ছিল ইন্দ্ৰিয়বোধের দেখাশোনায়, সেইটেকে জ্ঞানের যোগে বিশেষভাবে অধিকার করে নিলে সকল দেশের সকল কালের মানুষের বুদ্ধি । ভাব প্রকাশের দিকেও মাকুবের সেই দশা ঘটল । তার খুশি, তার দুঃখ, তার রাগ, তার ভালোবাসাৰে মানুষ কেবলমাত্র প্রকাশ করল তা নয়, তাকে প্রকাশের উৎকর্ষ দিতে লাগল ; তাতে সে আশু উদবেগের প্রবর্তন ছাড়িয়ে গেল, তাতে মানুষ লাগালে ছন্দ, লাগালে স্বর, ব্যক্তিগত ৰেঙ্গনাকে দিলে বিশ্বজনীন রূপ। তার আপন ভালোমনালাগার জগৎকে অন্তরঙ্গ ভাবে সকল মানুষের সাহিত্যজগৎ করে নিলে। সাহিত্য শৰটার কোনো ধাতুগত অর্থব্যাখ্যা কোনো অলংকারশাস্ত্রে আছে কিনা জানি না। ঐ শব্দটার যখন প্রথম উদ্ভাবন হয়েছিল তখন ঠিক কী বুঝে হয়েছিল তা নিশ্চিত বলবার মতো বিস্ত আমার নেই। কিন্তু, আমি যাকে সাহিত্য বলে থাকি তার সঙ্গে ঐ শব্দটার অর্থের মিল করে যদি দেখাই তবে তাতে বোধ করি দোষ হবে না। সাহিত্যের সহজ অর্থ ষা বুঝি সে হচ্ছে নৈকট্য, অর্থাৎ সম্মিলন। মানুষকে মিলতে হয় নানা প্রয়োজনে, আবার মানুষকে মিলতে হয় কেৰল মেলবারই জন্তে, অর্থাৎ সাহিত্যেরই উদেশে। শাকসবজির খেতের সঙ্গে মামুষের যোগ ফসল-ফলানোর যোগ ।