পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্যের পথে ○袋○ আপন ভাষাকেই বক্ষে টেনে নিলেন । যে-যন্ত্র ছিল ক্ষীণধ্বনি একতার। তাকে অবজ্ঞা করে ত্যাগ করলেন না, তাতেই তিনি গভীর স্বরের নানা তার চড়িয়ে তাকে রুদ্রবীণা করে তুললেন । এ যন্ত্র একেবারে নতুন, একমাত্র তারই আপন-গড়া। কিন্তু, তার এই সাহস তো ব্যর্থ হল না। অপরিচিত অমিত্ৰাক্ষর ছন্দের ঘনঘর্ঘরমঞ্জিত রখে চড়ে বাংলাসাহিত্যে সেই প্রথম আবির্ভূত হল আধুনিক কাব্য রাজবদ্ধরতধ্বনি’– কিন্তু, তাকে সমাদরে আহবান করে নিতে বাংলাদেশে অধিক সময় তো লাগে নি। অথচ এর অনতিপূর্বকালবৰ্তী সাহিত্যের যে-নমুনা পাওয়া যায় তার সঙ্গে এর কি স্থদুর তুলনাও চলে । আমি জানি, এখনও আমাদের দেশে এমন মানুষ পাওয়া যায় বারা সেই পুরাতনকালের অনুপ্রাসকণ্টকিত শিথিল ভাষার পৌরাণিক পাচালি প্রভৃতি গানকেই বিশুদ্ধ ন্যাশনাল সাহিত্য আখ্যা দিয়ে আধুনিক সাহিত্যের প্রতি প্রতিকূল কটাক্ষপাত করে থাকেন। বলা বাহুল্য, অধিকাংশ স্থলেই সেটা একটা ভান মাত্র । তারা যে স্বয়ং যথার্থতঃ সেই সাহিত্যেরই রসসম্ভোগে একান্ত নিবিষ্ট থাকেন, রচনায় বা আলোচনায় তার প্রমাণ পাওয়া যায় না। ভূনির্মাণের কোনো এক আদিপর্বে হিমালয়পৰ্বতশ্রেণী স্থিতিলাভ করেছিল, আজ পর্যন্ত সে আর বিচলিত হয় নি ; পর্বতের পক্ষেই এটা সম্ভবপর। মানুষের চিত্ত তো স্থাণু নয় ; অস্তরে বাহিরে চার দিক থেকেই নানা প্রভাব তার উপর নিয়ত কাজ করছে, তার অভিজ্ঞতার ব্যাপ্তি এবং অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে নিরন্তর ; সে যদি জড়বৎ অসাড় না হয় তা হলে তার আত্মপ্রকাশে বিচিত্র পরিবর্তন ঘটবেই, ন্যাশনাল আদর্শ নাম দিয়ে কোনো-একটি স্বদূর ভূতকালবতী আদশবন্ধনে নিজেকে নিশ্চল করে রাখা তার পক্ষে স্বাভাবিক হতেই পারে না, যেমন স্বাভাবিক নয় চীনে মেয়েদের পায়ের বন্ধন। সেই বন্ধনকে ন্যাশনাল নামের ছাপ দিয়ে গর্ব করা বিড়ম্বনা । সাহিত্যে বাঙালির মন অনেক কালের আচারসংকীর্ণতা থেকে অবিলম্বে মুক্তি যে পেয়েছিল, তাতে তার চিৎশক্তির অসামান্ততাই প্রমাণ করেছে । 準 নবযুগের প্রাণবান সাহিত্যের স্পর্শে কল্পনাবৃত্তি যেই নবপ্রভাতে উদবোধিত হল অমনি মধুসূদনের প্রতিভা তখনকার বাংলাভাষার পায়ে-চলা পথকে আধুনিক কালের রথযাত্রার উপযোগী করে তোলাকে চুরাশা বলে মনে করলে না। আপন শক্তির পরে শ্রদ্ধা ছিল বলেই বাংলাভাষার পরে কবি শ্রদ্ধা প্রকাশ করলেন ; বাংলাভাষাকে নিৰ্ভীকভাবে এমন আধুনিকতায় দীক্ষা দিলেন যা তার পূর্বাহুবৃত্তি থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। বঙ্গবাণীকে গম্ভীর স্বয়নির্ঘোষে মন্দ্রিত করে তোলবার জন্তে সংস্কৃতভাণ্ডার