পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজা δSδο উত্তরীয়, হাতে অশোকের মঞ্জরী, তামে তানে তোমার বীণার সব-কটি সোনার তার উতলা । রাজা । এত বিচিত্ররূপ দেখছ তবে কেন সব বাদ দিয়ে কেবল একটি বিশেষ মূর্তি দেখতে ঢাচ্ছ ? সেটা যদি তোমার মনের মতো না হয় তবে তো সমস্ত গেল । সুদৰ্শন । মনের মতো হবে নিশ্চয় জানি । রাজা । মন যদি তার মতে হয় তবেই সে মনের মতো হবে । আগে তাই হ’ক । সুদৰ্শন। সত্য বলছি এই অন্ধকারের মধ্যে যখন তোমাকে দেখতে না পাই অথচ তুমি আছ বলে জানি তখন এক-একবার কেমন একটা ভয়ে আমার বুকের ভিতরটা কেঁপে ওঠে । রাজা । সে-ভয়ে দোষ কী ? প্রেমের মধ্যে ভয় না থাকলে তার রস হালক। হয়ে যায় । সুদৰ্শন । আচ্ছ। আমি জিজ্ঞাসা করি এই অন্ধকারের মধ্যে তুমি আমাকে দেপতে পাও ? রাজা । পাই বইকি ! সুদৰ্শন। কেমন করে দেপতে পাও? আচ্ছা, কী দেপ ? রাজা । দেপতে পাই যেন অনস্ত আকাশের অন্ধকার আমার আনন্দের টানে ঘুরতে ঘুরতে কত নক্ষত্রের আলে৷ টেনে নিয়ে এসে একটি জায়গায় রূপ ধরে দাড়িয়েছে । তার মধ্যে কত যুগের ধ্যান, কত আকাশের আবেগ, কত ঋতুর উপহার ! সুদৰ্শন । আমার এত রূপ! তোমার কাছে যপন শুনি বুক ভরে ওঠে । কিন্তু ভালো করে প্রত্যয় হয় না ; নিজের মধ্যে তো দেখতে পাই নে । 蠢 রাজা । নিজের আয়নায় দেখা যায় না--ছোটো হয়ে যায়। আমার চিত্তের মধ্যে যদি দেপতে পাও তো দেখবে সে কতবড়ে ; আমার হৃদয়ে তুমি যে আমার দ্বিতীয়, তুমি সেপানে কি শুধু তুমি ! * সুদৰ্শন ! বলে বলে। এমনি করে বলে ! আমার কাছে তোমার কথা গানের মতো বোধ হচ্ছে,–যেন অনাদিকালের গান, যেন ওম্ম-জন্মান্তর শুনে এসেছি । সে কি তুমিই শুনিয়েছ, আর আমাকেই শুনিয়েছ ? না, যাকে শুনিয়েছ সে আমার চেয়ে অনেক বড়ো, অনেক সুন্দর ;–তোমার গানে সেই আলোক-সুন্দরীকে দেখতে পাই—সে কি আমার মধ্যে, না তোমার মধ্যে ? তুমি আমাকে যেমন করে দেখছ তাই একবার এক নিমেষের জন্ত আমাকে দেখিয়ে দাও না ! তোমার কাছে অন্ধকার বলে কি কিছুই নেই ? সেইজন্তেই তো তোমাকে কেমন আমার ভয় করে। এই যে কঠিন কালো লোহার