পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী واج مج সুদৰ্শন । ছিছিছি আমার যেমন প্ৰগলভতা তেমনি শাস্তি হয়েছে। তুই আমার ফুল ফিরিয়ে আনলি নে কেন ? রোহিণী। ফিরিয়ে আনব কী করে ? পাশে ছিলেন কাঞ্চীর রাজা, তিনি খুব চতুর—চকিতে সমস্ত বুঝতে পারলেন--মুচকে হেসে বললেন, মহারাজ, মহিষী সুদর্শন আজ বসন্ত-সখার পূজার পুষ্পে মহারাজের অভ্যর্থনা করছেন। শুনে হঠাৎ তিনি সচেতন হয়ে উঠে বললেন, আমার রাজসম্মান পরিপূর্ণ হল । আমি লজ্জিত হয়ে ফিরে আসছিলুম এমন সময়ে কান্ধীর রাজা মহারাজের গলা থেকে স্বহস্তে এই মুক্তার মালাটি খুলে নিয়ে আমাকে বললেন, সখী, তুমি যে সৌভাগ্য বহন করে এনেছ তার কাছে পরাভব স্বীকার করে মহারাজের কণ্ঠের মালা তোমার হাতে আত্মসমপণ করছে । সুদৰ্শন । কাঞ্চীর রাজাকে বুঝিয়ে দিতে হল ? আজকের পূর্ণিমার উংসব আমার অপমান একেবারে উদঘাটিত করে দিলে। তা হ’ক, যা তুই যা, আমি একটু একলা থাকতে চাই । ( রোহিণীর প্রস্থান ) আজ এমন করে আমার দর্প চূর্ণ হয়েছে তবু সেই মোহন রূপের কাছ থেকে মন ফেরাতে পারছি নে ! অভিমান আর রইল না—পরাভব, সর্বত্রই পরাভব—বিমুখ হয়ে থাকব সে-শক্তিটুকুও নেই। কেবল ইচ্ছে করছে ওই মালাটা রোহিণীর কাছ থেকে চেয়ে নিই। কিন্তু ও কী মনে করবে। রোহিণী । রোহিণী । ( প্রবেশ করিয়া") কী মহারানী । সুদৰ্শন। আজকের ব্যাপারে তুই কি পুরস্কার পাবার যোগ্য ? রোহিণী । তোমার কাছে না হ’ক যিনি দিয়েছেন তার কাছ থেকে পেতে পারি। সুদৰ্শনা । না, না, ওকে দেওয়া বলে না ও জোর করে নেওয়া । রোহিণী । তবু, রাজকণ্ঠের অনাদরের মালাকেও অনাদর করি এমন স্পধা আমার নয় । সুদৰ্শন । এ অবজ্ঞার মালা তোর গলায় দেখতে আমার ভালো লাগছে না । দে ওটা খুলে দে। ওর বদলে আমার হাতের কঙ্কণটা তোকে দিলুম—এই নিয়ে তুই চলে যা । ( রোহিণীর প্রস্থান ) হার হল, আমার হার হল । এ মালা ছুড়ে ফেলে দেওয়া উচিত ছিল—পারলুম না। এ যে কাটার মালার মতো আমার আঙুল বিধছে তবু ত্যাগ করতে পারলুম না। উংসব-দেবতার হাত থেকে এই কি আমি পেলুম—এই আগৌরবের মালা ।