পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের কবিতা ኟom অমিতর নেশাই হল স্টাইলে । কেবল সাহিত্য-বাছাই কাজে নয়, বেশে ভূষায় ব্যবহারে । ওর চেহারাতেই একটা বিশেষ ছাদ আছে,–পাচজনের মধ্যে ও যে-কোনো একজন মাত্র নয়, ও হল একেবারে পঞ্চম। অন্তকে বাদ দিয়ে চোখে পড়ে । দাড়িগোফ-কামানে চাচা-মাজা চিকন তামবৰ্ণ পরিপুষ্ট মুখ, স্ফর্তিভর ভাবটা, চোখ চঞ্চল, হাসি চঞ্চল, নড়াচড়া চলাফের চঞ্চল, কথার জবাব দিতে একটুও দেরি হয় না ; মনটা এমন একরকমের চকমকি যে, ঠন করে একটু ঠকলেই ফুলিঙ্গ ছিটকে পড়ে । দেশী কাপড় প্রায়ই পরে, কেননা ওর দলের লোক সেটা পরে না । ধুতি সাদা থানের, যত্নে ক্টোচানো, কেননা ওর বয়সে এ-রকম ধুতি চলতি নয়। পাঞ্জাবি পরে, তার বা কাধ থেকে বোতাম ডান-দিকের কোমর অবধি, আস্তিনের সামনের দিকটা কমুই পযস্ত দু-ভাগ করা ; কোমরে ধুতিটাকে ঘিরে একটা জরি-দেওয়া চওড়া পয়েরি রঙের ফিতে, তারই বা দিকে ঝুলছে বৃন্দাবনী ছিটের এক ছোটো থলি, তার মধ্যে ওর ট্যাকঘড়ি ; পায়ে সাদা চামড়ার উপর লাল চামড়ার কাজ-করা কটকি জুতো । বাইরে ষপন যায়, একটা পাট-করা পাড়ওআল মাদ্রাজি চাদর বা কাধ থেকে হাটু অবধি ঝুলতে থাকে, বন্ধুমহলে যপন নিমন্ত্রণ থাকে মাথায় চড়ায় এক মুসলমানি লক্ষে টুপি, সাদার উপর সাদা কাজ-করা । একে ঠিক সাজ বলব না, এ হচ্ছে ওর একরকমের উচ্চ হাসি। ওর বিলিতি সাজের মর্ম আমি বুঝি নে, যারা বোঝে তারা বলে—কিছু আলুথালু গোছের বটে, কিন্তু ইংরেজিতে যাকে বলে ডিসটিগুইশড। নিজেকে অপরূপ করবার শপ ওর নেই, কিন্তু ফ্যাশানকে বিদ্রুপ করবার কৌতুক ওর অপর্যাপ্ত। কোনোমতে বয়স মিলিয়ে যারা কুষ্ঠির প্রমাণে যুবক তাদের দর্শন মেলে পথে ঘাটে ; অমিতর দুর্লভ যুবকত্ব নির্জলা যৌবনের জোরেই, একেবারে বেহিসেবি, উড়নচণ্ডী, বান ডেকে ছুটে চলেছে বাইরের দিকে, সমস্ত নিয়ে চলেছে ভাসিয়ে, হাতে কিছুই রাপে না । এদিকে ওর দুই বোন, যাদের ডাকনাম সিসি এবং লিসি, যেন নতুনবাজারে অত্যস্ত হালের আমদানি,—ফ্যাশানের পসরায় আপাদমস্তক যত্বে মোড়ক-করা পয়লা নম্বরের প্যাকেট বিশেষ। উচুখুরওআল জুতো, লেসওআলা বুককীট জ্যাকেটের ফকে প্রবালে আম্বারে মেশানো মালা, শাড়িটা গায়ে তিধগভঙ্গীতে আঁট করে ল্যাপটনে । এর খুটপুট করে দ্রুত লয়ে চলে ; উচ্চৈঃস্বরে বলে ; স্তরে স্তরে তোলে সুন্নাগ্র হাসি ; মুখ ঈষৎ বেঁকিয়ে স্মিতহাস্তে উচু কটাক্ষে চায়, জানে কাকে বলে ভাবগর্ভ চাউনি ; গোলাপি রেশমের পাখা ক্ষণে ক্ষণে গালের কাছে ফুরফুর করে সঞ্চালন করে, এবং পুরুষবন্ধুর চৌকির হাতার উপরে বসে সেই পাখার আঘাতে তাদের কৃত্রিম স্পর্ধার প্রতি কৃত্রিম তর্জন প্রকাশ করে থাকে। چینی -سس- ه دا