পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের কবিতা ኟጫ® নীলার সঙ্গে হীরে এবং হীরের সঙ্গে পান্না লাগিয়ে এক প্রহরের আঙটি সম্পূর্ণ করলে অমনি দিলে সেটা সমুদ্রের জলে ফেলে, আর তাকে খুঁজে পাবে না কেউ।” “ভালোই হল, তোমার ভাবনা রইল না, অমিট, বিশ্বকৰ্মার স্তাকরার বিল তোমাকে * শুধতে হবে না।” “কিন্তু, লিলি, কোটি কোটি যুগের পর যদি দৈবাং তোমাতে আমাতে মঙ্গলগ্রহের লাল অরণ্যের ছায়ায় তার কোনো-একটা হাজার-ক্রোশী পালের ধারে মূপোমুখি দেপা হয়, আর যদি শকুন্তলার সেই জেলেট। বোয়াল মাছের পেট চিরে আজকের এই অপরূপ সোনার মুহূর্তটিকে আমাদের সামনে এনে ধরে, চমকে উঠে মুপ-চাওয়া-চাউয়ি করব, তার পরে কী হবে ভেবে দেপো ।” লিলি অমিতকে পাপার বাড়ি তাড়না করে বললে, “তার পরে সোনার মুহূর্তটি অন্যমনে পসে পড়বে সমুদ্রের জলে । আর তাকে পাওয়া যাবে না। পাগলা স্যাকরার গড়া এমন তোমার কত মুহূর্ত খসে পড়ে গেছে, ভুলে গেছ বলে তার হিসেব নেই।” এই বলে লিলি তাড়াতাড়ি উঠে তার সখীদের সঙ্গে গিয়ে যোগ দিলে । অনেক ঘটনার মধ্যে এই একটা ঘটনার নমুনা দেওয়া গেল । অমিতর লোন সিসি-লিসির ওকে বলে, “আমি, তুমি বিয়ে কর না কেন ?” অমিত বলে, “লিয়ে ব্যাপারটায় সকলের চেয়ে জরুরি হচ্ছে পাত্রা, তার নিচেই পাত্র ।” সিসি বলে, “অবাক করলে, মেয়ে এত আছে।” অমিত বলে, “মেয়ে বিয়ে করত সেই পুরাকালে, লক্ষণ মিলিয়ে। আমি চাই পাত্রী, আপন পরিচয়েই যার পরিচয়, জগতে যে অদ্বিতীয় ।” সিসি বলে, “তোমার ঘরে এলেই তুমি হবে প্রথম, সে হবে দ্বিতীয়, তোমার পরিচয়েই হবে তার পরিচয় ।” অমিত বলে, “আমি মনে-মনে যে-মেয়ের ব্যর্থ প্রত্যাশায় ঘটকালি করি সে গরঠিকানা মেয়ে। প্রায়ই সে ঘর পর্যন্ত এসে পৌছোয় না। সে আকাশ থেকে পড়স্ত তারা, হৃদয়ের বায়ুমণ্ডল ছুতে-না-ছুতেই জলে ওঠে, বাতাসে যায় মিলিয়ে, বাস্তুঘরের মাটি পর্যন্ত আসা ঘটেই ওঠে না।” সিসি বলে, “অর্থাং, সে তোমার বোনেদের মতো একটুও না।” অমিত বলে, “অর্থাং সে ঘরে এসে কেবল ঘরের লোকেরই সংখ্যা বৃদ্ধি করে না।” লিসি বলে, “আচ্ছ। ভাই সিসি, বিমি বোস তো আমির জন্যে পথ চেয়ে তাকিয়ে আছে, ইশারা করলেই ছুটে এসে পড়ে, তাকে ওর পছন্দ নয় কেন ? বলে,