পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী । و ۹ج তার কালচার নেই। কেন, ভাই, সে তে এম.এ.তে বটানিতে ফাস্ট। বিদ্যেকেই তো বলে কালচার ” অমিত বলে, “কমল-হীরের পাথরটাকেই বলে বিদ্যে, আর ওর থেকে যে-আলো ঠিকরে পড়ে তাকেই বলে কালচার। পাথরের ভার আছে, আলোর আছে দীপ্তি ।” লিসি রেগে উঠে বলে, “ইস, বিমি বোসের আদর নেই ওঁর কাছে ! উনি নিজেই না কি তার যোগ্য ! আমি যদি বিমি বোসকে বিয়ে করতে পাগল হয়েও ওঠে আমি তাকে সাবধান করে দেব সে যেন ওর দিকে ফিরেও না তাকায় ।” অমিত বললে, “পাগল না হলে বিমি বোসকে বিয়ে করতে চাইবই বা কেন ? সেসময়ে আমার বিয়ের কথা না ভেবে উপযুক্ত চিকিৎসার কথা ভেবো ।” । আত্মীয়স্বজন অমিতর বিয়ের আশা ছেড়েই দিয়েছে। তারা ঠিক করেছে, বিয়ের দায়িত্ব নেবার যোগ্যতা ওর নেই, তাই ও কেবল অসম্ভবের স্বপ্ন দেখে আর উলটো কথা বলে মানুষকে চমক লাগিয়ে বেড়ায় । ওর মনটা আলেয়ার আলো, মাঠে বাটে ধাধা লাগাতেই আছে, ঘরের মধ্যে তাকে ধরে আনবার জো নেই । ইতিমধ্যে অমিত যেখানে-সেখানে হো হে করে বেড়াচ্ছে,— ফিরপোর দোকানে যাকে-তাকে চা পাওয়াচ্ছে, যখন-তখন মোটরে চড়িয়ে বন্ধুদের অনাবহুক ঘুরিয়ে নিয়ে আসছে ; এখান-ওখান থেকে যা-তা কিনছে আর একে-ওকে বিলিয়ে দিচ্ছে, ইংরেজি বই সদ্য কিনে এ-বাড়িতে ও-বাড়িতে ফেলে আসছে, আর ফিরিয়ে আনছে না । ওর বোনের ওর যে-অভ্যাসটা নিয়ে ভারি বিরক্ত সে হচ্ছে ওর উলটো কথা বলা । সজ্জনসভায় যা-কিছু সর্বজনের অক্সমোদিত ও তার বিপরীত কিছু একটা বলে বসবেই । একদা কোন একজন রাষ্ট্রতাত্ত্বিক ডিমোক্রাসির গুণ বর্ণনা করছিল, ও বলে खेळेल “বিষ্ণু যখন সতীর মৃতদেহ খণ্ড খণ্ড করলেন তখন দেশ জুড়ে যে পানে-সেখানে তার এক-শর অধিক পীঠস্থান তৈরি হয়ে গেল । ডিমোক্রাসি আজ যেখানে-সেখানে যত টুকরো অ্যারিস্টক্রেসির পুজো বসিয়েছে,—খুদে খুদে অ্যারিস্টক্রাটে পৃথিবী ছেয়ে গেল, কেউ পলিটিক্সে, কেউ সাহিত্যে, কেউ সমাজে। তাদের কারও গাম্ভাব নেই, কেননা তাদের নিজের পরে বিশ্বাস নেই।” একদা মেয়েদের পরে পুরুষের আধিপত্যের অত্যাচার নিয়ে কোনো সমাজহিতৈষী অবলাবান্ধব নিন্দা করছিল পুরুষদের । অমিত মুখ থেকে সিগারেট নামিয়ে ফস করে বললে, “পুরুষ আধিপত্য ছেড়ে দিলেই মেয়ে আধিপত্য শুরু করবে। দুর্বলের আধিপত্য অতি ভয়ংকর।”