পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের কবিতা ૨છG: জন্যে মোটর-দূতটাই প্রশস্ত—তার মধ্যে “ধূমজ্যোতিঃসলিলমক্কতাং সন্নিপাত" বেশ ঠিক পরিমাণেই আছে—আর চালকের হাতে একখানি চিঠি দিলে কিছুই অস্পষ্ট থাকে না । ও ঠিক করে নিলে আগামী বৎসরে আষাঢ়ের প্রথম দিনেই মেঘদূতবর্ণিত রাস্ত দিয়েই মোটরে করে যাত্রা করবে, হয়তো বা অদৃষ্ট ওর পথ চেয়ে “দেহলীদত্তপুপা” যে-পথিকবধূকে এতকাল বসিয়ে রেখেছে সেই অবস্তিক হ’ক বা মালবিকাই হ’ক, বা হিমালয়ের কোনো দেবদারুবনচরিণীই হ’ক ওকে হয়তো কোনো একটা অভাবনীয় উপলক্ষ্যে দেথা দিতেও পারে। এমন সময়ে হঠাৎ একটা বাকের মুখে এসেই দেখলে আর-একটা গাড়ি উপরে উঠে আসছে। পাখ-কাটাবার জায়গা নেই। ব্রেক কষতে কমতে গিয়ে পড়ল তার উপরে-পরম্পর আঘাত লাগল, কিন্তু অপঘাত ঘটল না । অন্য গাড়িটা পানিকটা গড়িয়ে পাহাড়ের গায়ে আটকে থেমে গেল । একটি মেয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাড়াল। সদ্য মৃত্যু-আশঙ্কার কালো পটগান তার পিছনে, তারই উপরে সে যেন ফুটে উঠল একটি বিদ্যুংরেপায় আঁকা সুস্পষ্ট ছবি— চারিদিকের সমস্থ হতে স্বতন্ত্র । মন্দারপর্বতের নাড়া-খাওয়া ফেনিয়ে-ওঠা সমুদ্র থেকে এইমাত্র উঠে এলেন লক্ষ্মী, সমস্ত আন্দোলনের উপরে—মহাসাগরের বুক তপনো ফুলে ফুলে কেঁপে উঠছে। দুর্লভ অবসরে অমিত তাকে দেখলে । ড্রয়িংরুমে এ-মেয়ে অন্য পাঁচজনের মাঝপানে পরিপূর্ণ আত্মস্বরূপে দেখা দিত না । পৃথিবীতে হয়তো দেখবার যোগ্য লোক পাওয়া যায়, তাকে দেপবার যোগ্য জায়গাটি পাওয়া যায় না । মেয়েটির পরনে সরু-পাড়-দেওয়া সাদা আলোয়ানের শাড়ি, সেই আলোয়ানেরই জ্যাকেট, পায়ে সাদা চামড়ার দিশি ছাদের জুতো । তন্ত্র দীর্ঘ দেহটি, বর্ণ চিকন স্যাম, টান চোপ ঘন পঙ্কচ্ছায়ায় নিবিড় স্নিগ্ধ, প্রশস্ত ললাট অবারিত করে পিছু হটিয়ে চুল আট করে বাধা, চিবুক ঘিরে শুকুমার মুপের ডৌলটি একটি অনতিপক্ক ফলের মতো রমণীয়। জ্যাকেটের হাত কবজি পর্যন্ত, দু-হাতে দুটি সরু প্লেন বালা । ব্রোচের বন্ধনীন কাধের কাপড় মাথায় উঠেছে, কটকি-কাজ-করা রুপের কাটা দিয়ে খোপার সঙ্গে বদ্ধ । অমিত গাড়িতে টুপিট খুলে রেপে তার সামনে চুপ করে এসে দাড়াল। যেন একটা পাওনা শাস্তির অপেক্ষায় । তাই দেখে মেয়েটির বুঝি দয়া হল, একটু কৌতুকও বোধ করলে । অমিত মুদুম্বরে বললে, “অপরাধ করেছি।” মেয়েটি হেসে বললে, “অপরাধ নয়, ভুল। সেই ভুলের গুরু আমার থেকেই ।” উৎসজলের যে-উচ্ছলতা ফুলে ওঠে, মেয়েটির কণ্ঠস্বর তারই মতো নিটোল। অল্পবয়সের বালকের গলার মতে মন্থণ এবং প্রশস্ত। সেদিন ঘরে ফিরে এসে অমিত