পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

|9ృe রবীন্দ্র-রচনাবলী অমিত হেসে বললে, “কাজ উপস্থিত হলেই প্রস্তুত হওয়া চাই, এই উপদেশের বাজারদর বেশি, আকববরি মোহরের মতে,-কিন্তু ওর উলটো পিঠে খোদাই থাকা উচিত, অকাজ উপস্থিত হলেই সেটাকে বীরের মতো মেনে নেওয়া চাই।” “তোমার বীরত্বের পরিচয় আজকাল প্রায়ই পাওয়া যাচ্ছে।” যতির পিঠ চাপড়িয়ে অমিত বললে, “জরুরি কাজটাকে এক কোপে বলি দেবার পবিত্র অষ্টমী তিথি তোমার জীবনপঞ্জিকায় একদিন যখন আসবে দেবীপূজায় বিলম্ব ক'রো না, ভাই, তার পরে বিজয়াদশমী আসতে দেরি হয় না।” যতি গেল চলে, অকর্তব্যবুদ্ধিও সজাগ, যাকে আশ্রয় করে আকাজ দেপা দেয় তারও দেখা নেই। অমিত ঘর ছেড়ে গেল বাইরে। ফুলে আচ্ছন্ন গোলাপের লতা, একধারে স্বর্যমুখীর ভিড়, আর-একধারে চোঁকে কাঠের টবে চন্দ্রমল্লিক। ঢালুঘাসের খেতের উপরপ্রান্তে এক মস্ত যুক্যালিপটস গাছ । তারই গুড়িতে হেলান দিয়ে সামনে পা ছড়িয়ে বসে আছে লাবণ্য । ছাই রঙের আলোয়ান গায়ে, পায়ের উপর পড়েছে সকালবেলাকার রোদর । কোলে রুমালের উপর কিছু রুটির টুকরো, কিছু ভাঙা আখরোট। আজ সকালটা জীবসেবায় কাটাবে ঠাউরেছিল, তাও গেছে ভুলে । অমিত কাছে এসে দাড়াল, লাবণ্য মাথা তুলে তার মুখের দিকে চেয়ে চুপ করে রইল, মৃদু হাসিতে মূপ গেল ছেয়ে। অমিত সামনাসামনি বসে বললে, “সুখবর আছে । মাসিমার মত পেয়েছি।” লাবণ্য তার কোনো উত্তর না করে অদূরে একটা নিষ্ফল। পিচগাছের দিকে একটা ভাঙা আখরোট ফেলে দিলে । দেখতে দেপতে তার গুড়ি বেয়ে একটা কাঠবিড়ালি নেমে এল । এই জীবটি লাবণ্যর মুষ্টিভিধারিদলের একজন । অমিত বললে, “যদি আপত্তি না কর তোমার নামটা একটু ছেঁটে দেব ।” “তা দাও।” “তোমাকে ডাকব বন্য বলে ।” “दन्नु !” “না না, এ-নামটাতে হয়তো বা তোমার বদনাম হল । এ-রকম নাম আমাকেই সাজে। তোমাকে ডাকব, বন্যা কী বল ?” “তাই ডেকো, কিন্তু তোমার মাসিমার কাছে নয় ।” “কিছুতেই নয়। এ-সব নাম বীজমস্ত্রের মতে, কারও কাছে ফাস করতে নেই । এ রইল আমার মুখে আর তোমার কানে।”

  • আচ্ছা বেশ ।”