পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S)>8 রবীন্দ্র-রচনাবলী আমাকে যতটুকু ভালো লাগে ততটুকুই লাণ্ডক, কিন্তু একটুও তুমি দায়িত্ব নিয়ো ম',— তাতেই আমি খুশি থাকব।” “বন্যা, এবার তবে আমার কথাটা বলতে দাও। কী আশ্চর্য করেই তুমি আমার চরিত্রের ব্যাখ্যা করেছ। তা নিয়ে কথা-কাটাকাটি করব না। কিন্তু একটা জায়গায় তোমার ভুল আছে। মানুষের চরিত্র জিনিসটাও চলে। ঘর-পোষা অবস্থায় তার একরকম শিকলি-বাধা স্থাবর পরিচয় । তার পরে একদিন ভাগ্যের হঠাৎ এক ঘায়ে তার শিকলি কাটে, সে ছুট দেয় অরণ্যে, তপন তার আর-এক মুতি ।" “আজ তুমি তার কোনটা ?” “যেটা আমার বরাবরের সঙ্গে মেলে না, সেইটে। এর আগে অনেক মেয়ের সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছিল, সমাজের কাটা পাল বেয়ে বাধা ঘাটে, রুচির ঢাকা-লণ্ঠন জালিয়ে । তাতে দেখাশোনা হয়, চেনাশোনা হয় না । তুমি নিজেই বলে, বন্যা, তোমার সঙ্গেও কি আমার সেই আলাপ ?” লাবণ্য চুপ করে রইল । অমিত বললে, “বাইরে বাইরে দুই নক্ষত্র পরস্পরকে সেলাম করতে করতে প্রদক্ষিণ করে চলে, কায়দাট বেশ শোভন, নিরাপদ, সেটাতে যেন তাদের রুচির টান, মর্মের মিল নয়। হঠাং যদি মরণের ধাক্কা লাগে, নিবে যায় দুই তারার লণ্ঠন, দোহে এক হয়ে ওঠবার আগুন ওঠে জ'লে । সেই আগুন জলেছে, অমিত রায় বদলে গেল । মানুষের ইতিহাসটাই এইরকম । তাকে দেখে মনে হয় ধারাবাহিক, কিন্তু আসলে সে আকস্মিকের মালা গাথা । সষ্টির গতি চলে সেই আকস্মিকের ধাক্কায় ধাক্কায়, দমকে দমকে, যুগের পর যুগ এগিয়ে যায় বীপতালের লয়ে । তুমি আমার তাল বদলিয়ে দিয়েছ, বন্যা, সেই তালেই তো তোমার সুরে আমার সুরে গাথা পড়ল ।” লাবণ্যর চোপের পাতা ভিজে এল । তবু এ-কথা মনে না-করে থাকতে পারলে মা যে, অমিতর মনের গড়নটা সাহিত্যিক, প্রত্যেক অভিজ্ঞতায় ওর মূপে কথার উচ্ছ্বাস তোলে। সেইটে ওর জীবনের ফসল, তাতেই ও পায় আনন্দ । আমাকে ওর প্রয়োজন সেইজন্যেই। যে-সব কথা ওর মনে বরফ হয়ে জমে আছে, ও নিজে যার ভার বোধ করে, কিন্তু আওয়াজ পায় না, আমার উত্তাপ লাগিয়ে তাকে গলিয়ে ঝরিয়ে দিতে হবে । দুজনে অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থেকে লাবণ্য হঠাং এক সময়ে প্রশ্ন করলে, “আচ্ছা, মিতা, তুমি কি মনে কর না, যেদিন তাজমহল তৈরি শেষ হল, সেদিন মমতাজের মৃত্যুর জন্যে শাজাহান খুশি হয়েছিলেন ? তার স্বপ্নকে অমর করবার জন্তে এই মৃত্যুম্ন ময়কার