পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○>や রবীন্দ্র-রচনাবলী দিয়ে৷ তারে বাণী যে-বাণী তোমার চিরন্তনী । তুমি ঝরনা, জীবনস্রোতে তুমি যে কেবল চলছ তা নয়, তোমার চলার সঙ্গে সঙ্গেই তোমার বলা । সংসারের যে-সব কঠিন অচল পাথরগুলোর উপর দিয়ে চল তারাওঁ তোমার সংঘাতে সুরে বেজে ওঠে । আমার ছায়াতে তোমার হাসিতে মিলিত ছবি, তাই নিয়ে আজি পরানে আমার মেতেছে কবি । পদে পদে তব আলোর ঝলকে ভামা আনে প্রাণে পলকে পলকে, মোর বাণীরূপ দেপিলাম আজি নিবরিণী, তোমার প্রবাহে মনেরে জাগায়, নিজেরে চিনি ৷” লাবণ্য একটু স্নান হাসি হেসে বললে, যতই আমার আলো থাক আর ধ্বনি থাক, তোমার ছায়া তল ছায়াই, সে-ছায়াকে আমি ধরে প্রাপতে পারব না ।” অমিত বললে, “কিন্তু একদিন হয়তে দেপবে আর কিছু যদি না থাকে আমার বাণীরূপ রয়েছে ।” লাবণ্য হেসে বললে, “কোথায় ? নিবারণ চক্রব তীর পাতায় ?" “আশ্চর্য কিছুই নেই । আমার মনের নিচের স্তরে যে-ধার বয়, নিবারণের ফোয়ারায় কেমন করে সেটা বেরিয়ে আসে ।” “তা হলে কোনো একদিন হয়তো কেবল নিবারণ চক্রব তীর ফোয়ারার মধ্যেই তোমার মনটিকৈ পাব, আর কোথাও নয়।” এমন সময় বাস থেকে লোক এল ডাকতে,- পাবার তৈরি । অমিত চলতে চলতে ভাবতে লাগল যে, লাবণ্য বুদ্ধির আলোতে সমস্তই স্পষ্ট করে জানতে চায় । মাহুষ স্বভাবত যেপানে আপনাকে ভোলাতে ইচ্ছা করে ও সেপানেও নিজেকে ভোলাতে পারে না । লাবণ্য যে-কথাটা বললে, সেটার তো প্রতিবাদ করতে পারছি নে। অন্তরাত্মার গর্ভার উপলব্ধি বাইরে প্রকাশ করতেই হয়, কেউ বা করে জীবনে, কেউ বা করে রচনায়,- জীবনকে ছুতে ছুতে, অথচ তার থেকে সরতে সরতে,