পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২২ রবীন্দ্র-রচনাবলী অমিত তাড়াতাড়ি টেবিলের নিচে থেকে বেরিয়ে এসে বললে, “আমার ঘরটা আজ অসম্বদ্ধ প্রলাপে মেতেছে, দশা আমার চেয়ে ভালো নয়।” “অসম্বদ্ধ প্ৰলাপ ?” “অর্থাং বাড়ির চালটা প্রায় ভারতবর্ষ বললেই হয়। অংশগুলোর মধ্যে সম্বন্ধটা' আলগা । এইজন্যে উপর থেকে উংপাত ঘটলেই চারিদিকে এলোমেলো অশ্রুবর্ষণ হতে থাকে, আর বাইরের দিক থেকে যদি ঝড়ের দাপট লাগে, তবে সে সে ক’রে উঠতে থাকে দীর্ঘশ্বাস । আমি তো প্রটেস্ট স্বরূপে মাথার উপরে এক মঞ্চ খাড়া করেছি,— ঘরের মিলগভৰ্মেন্টের মাঝপানেই নিরুপদ্রব হোমরুলের দৃষ্টান্ত । পলিটিকসের একটা মূলনীতি এখানে প্রত্যক্ষ ।” 暴 “মূলনীতিটা কী শুনি ।” “সেটা হচ্ছে এই যে, যে ঘরওআল। ঘরে বাস করে না সে যতবড়ে ক্ষমতাশালীই হ’ক তার শাসনের চেয়ে যে-দরিদ্র বাসাড়ে ঘরে থাকে তার যেমন-তেমন ব্যবস্থাও ভালো ” আজ লাবণ্যর পরে যোগমায়ার খুব রাগ হল । অমিতকে তিনি য তই গভীর করে স্নেহ করছেন ততই মনে-মনে তার মৃতিটা খুব উচু করেই গড়ে তুলছেন। “এত বিদ্যে, এত বুদ্ধি, এত পাস, অথচ এমন সাদ! মন । গুছিয়ে কথা বলবার কী অসামান্য শক্তি। আর যদি চেহারার কথা বল আমার চোপে তো লাবণ্যর চেয়ে ওকে অনেক বেশি সুন্দর ঠেকে । লাবণ্যর কপাল ভালো, অমিত কোন গ্রহের চক্রাস্তে ওকে এমন মুগ্ধ চোপে দেখেছে। সেই সোনার চাদ ছেলেকে লাবণ্য এত করে দুঃপ দিচ্ছে। থামক বলে বসলেন কিনা, বিয়ে করবেন না । যেন কোন রাজরাজেশ্বরী। ধন্তক-ভাঙা পণ । এত অহংকার সইবে কেন ? পোড়ারমুধাকে যে কেঁদে কেঁদে মরতে হবে ।” একবার যোগমায়া ভাবলেন অমিতকে গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যাবেন তাদের বাড়িতে। তার পরে কী ভেবে বললেন, “একটু বসে, বাবা, আমি এপনই আসছি।” বাড়ি গিয়েই চোখে পড়ল লাবণ্য তার ঘরের সোফায় হেলান দিয়ে পায়ের উপর শাল মেলে গোর্কির “মা” বলে গল্পের বই পড়ছে। ওর এই আরামটা দেখে ওঁর মনেমনে রাগ আরও বেড়ে উঠল । । বললেন, “চলে, একটু বেড়িয়ে আসবে।” সে বললে, “কর্তমা, আজ বেরোতে ইচ্ছে করছে না।” যোগমায়া ঠিক বুঝলেন না যে, লাবণ্য নিজের কাছ থেকে ছুটে গিয়ে এই গল্পের