পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের কবিতা ՏՀԳ এ-কুটিরেও তোমার সে-সাধনা ভিজে কাগজে চাপা পড়বে না। বর পাই নি বলে নিজেকে ভোলাচ্ছ ? মনে-মনে নিশ্চয় জান পেয়েছ ।” এই বলে লাবণ্যকে অমিতর পাশে দাড় করিয়ে তার ডান হাত অমিতর ডান হাতের উপর রাখলেন। লাবণ্যর গলা থেকে সোনার হারগাছি খুলে তাই দিয়ে দুজমের হাত বেঁধে বললেন, “তোমাদের মিলন অক্ষয় হ’ক ।” অমিত লাবণ্য দুজনে মিলে যোগমায়ার পায়ের ধুলো নিয়ে প্রণাম করলে । তিনি বললেন, “তোমরা একটু বসে, আমি বাগান থেকে কিছু ফুল নিয়ে আসি গে।” বলে গাড়ি করে ফুল আনতে গেলেন । অনেকক্ষণ দুইজনে পাটিয়াটার উপরে পাশাপাশি চুপ করে বসে রইল। একসময়ে অমিতর মুপের দিকে মুখ তুলে লাবণ্য মৃদুস্বরে বললে, “আজ তুমি সমস্ত দিন গেলে না কেন ?” অমিত উত্তর দিলে, “কারণটা এত বেশি তুচ্ছ যে আজকের দিনে সে-কথাটা মূপে আনতে সাহসের দরকার । ইতিহাসে কোনোপানে লেপে না যে, হাতের কাছে বর্ষাতি ছিল না বলে বাদলার দিনে প্রেমিক তার প্রিয়ার কাছে যাওয়া মুলতবি রেপেছে। বরঞ্চ লেপা আছে সাতার দিয়ে অগাধ-জল পার হওয়ার কথা । কিন্তু সেটা অস্তরের ইতিহাস, সেপানকার সমূদ্রে আমিও কি সঁা তার কাটছি নে ভাবছ ? সে-আকুল কোনোকালে কি পার হব ? For we are bound where mariner has not yet dared to go, And we will risk the ship, ourselves and all. আমরা যাব যে পানে কোনো যায় নি নেয়ে সাহস করি, ডুবি যদি তো ডুবি না কেন, ডুবুক সবি, ডুলুক তরী। বন্যা, আমার জন্যে আজ তুমি অপেক্ষ করে ছিলে ?” “ই, মিতা, বৃষ্টির শব্দে সমস্ত দিন যেন তোমার পায়ের শব্দ শুনেছি। মনে হয়েছে কত অসম্ভব দূর থেকে যে আসছ তার ঠিক নেই। শেযকালে তো এসে পৌছোলে আমার জীবনে ৷” “বস্তা, আমার জীবনের মাঝখানটিতে ছিল এতকাল তোমাকে না-জানার একটা প্রকাণ্ড কালে গর্ত । ওইথানটা ছিল সব-চেয়ে কুত্র । আজ সেটা কানা ছাপিয়ে ভরে উঠল—তারই উপরে আলো ঝলমল করে, সমস্ত আকাশের ছায় পড়ে, আজ