পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

& ስኖ শেষের কবিতা ‘LLL লাবণ্য কাগজখানা ফিরিয়ে দিলে না । অমিত বললে, "এবারে তোমার চিঠির নমুনা দাও, দেখি তোমার শিক্ষা কতদূর এগোল ।” * * লাবণ্য একটা টুকরো কাগজে লিখতে যাচ্ছিল। অমিত বললে, “না, আমার এই নোটবইয়ে লেখে৷ ” - இ. লাবণ্য লিখে দিলে— “মিতা, ত্বমসি মম জীবনং, ত্বমসি মম ভূমণং, ত্বমসি মম ভবজলধিরত্নম্।” অমিত বইটা পকেটে পুরে বললে, আশ্চর্য এই, আমি লিগেছি মেয়ের মুখের কথা, তুমি লিখেছ পুরুষের। কিছুই অসংগত হয় নি। শিমূলকঠই হ’ক আর বকুলকাঠই হ’ক, যথন জলে তখন আগুনের চেহারাটা একই ।” লাবণ্য বললে, “নিমন্ত্রণ তো করা গেল, তার পরে ?” অমিত বললে, “সন্ধ্যাতার উঠেছে, জোয়ার এসেছে গঙ্গায়, হাওয়া উঠল বিরঝির করে ঝাউগাছগুলোর সার বেয়ে, বুড়ে বটগাছটার শিকড়ে শিকড়ে উঠল ম্রোতের ছলছলামি । তোমার বাড়ির পিছনে পদ্মদিঘি, সেইখানে পিড়কির নির্জন ঘাটে গা ধুয়ে চুল বেঁধেছ। তোমার এক-একদিন এক-এক রঙের কাপড়, ভাবতে ভাবতে যাব আজকে সন্ধ্যেবেলার রঙটা কী । মিলনের জায়গারও ঠিক নেই, কোনোদিন শান-বাধানে চাপাতলায়, কোনোদিন বাড়ির ছাতে, কোনোদিন গঙ্গার ধারের চাতালে। আমি গঙ্গায় স্নান সেরে সাদা মলমলের ধুতি আর চাদর পরব, পায়ে থাকবে হাতির দাতে কাজ-করা খড়ম । গিয়ে দেখব, গালচে বিছিয়ে বসেছ, সামনে রুপোর রেকাবিতে মোটা গোড়ে মালা, চন্দনের বাটিতে চন্দন, এক কোণে জলছে ধূপ । পুজোর সময় অন্তত দু-মাসের জন্তে দুজনে বেড়াতে বেরোব । কিন্তু দু-জনে দু-জায়গায়। তুমি যদি যাও পর্বতে আমি যাব সমূত্রে –এই তো আমার দাম্পত্য দ্বৈরাজ্যের নিয়মাবলি তোমার কাছে দাখিল করা গেল । এখন তোমার কী মত?” “মেনে নিতে রাজি আছি ।” “মেনে নেওয়া আর মনে নেওয়া, এই দুইয়ে যে তফাত আছে, বন্যা।” "তোমার যাতে প্রয়োজন আমার তাতে প্রয়োজন না-ও যদি থাকে তবু আপত্তি করব না ।” “প্রয়োজন নেই তোমার ?” "ন, নেই। তুমি আমার যতই কাছে থাক তবু আমার থেকে তুমি অনেক দূরে।