পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের কবিতা @రి( যোগমায়া পাশের ঘর থেকে তাড়াতাড়ি এসে জিজ্ঞাসা করলেন, “কা থাকবে, অমিত ? আমার টেবিলটা বোধ হচ্ছে থাকবে না ।” “জগতে বা-কিছু টেকসই সবই থাকবে। সংসারে নববধূ দুর্লভ, কিন্তু লাখের 'মধ্যে একটি যদি দৈবাং পাওয়া যায় সে চিরদিনই থাকবে নববধূ।” “একটা দৃষ্টান্ত দেখাও দেখি।” “একদিন সময় আসবে, দেখাব।” “বোধ হচ্ছে তার কিছু দেরি আছে, ততক্ষণ খেতে চলে ।” ১২ শেষ সন্ধ্যা আহার শেষ হলে অমিত বললে, “কাল কলকাতায় যাচ্ছি মাসিমা । আমার আত্মীয়স্বজন সবাই সন্দেহ করছে আমি খালিয়া হয়ে গেছি।” “আত্মীয়স্বজনরা কি জানে কথায় কথায় তোমার এত বদল সম্ভব ?” “খুব জানে, নইলে আত্মীয়স্বজন কিসের ? তাই বলে কথায় কথায় নয়, আর পাসিয়া হওয়া নয়। ষে-বদল আজ আমার হল এ কি জাত-বদল, এ ষে যুগ-বদল তার মাঝখানে একটা কল্পান্ত প্রজাপতি জেগে উঠেছেন আমার মধ্যে এক নূতন স্তষ্টিতে । মাসিম, অনুমতি দাও, লাবণ্যকে নিয়ে আজ একবাব বেড়িয়ে আসি । যাবার আগে শিলঙ পাহাড়কে আমাদের যুগল প্রণাম জানিয়ে যেতে চাই ।” যোগমায়া সম্মতি দিলেন । কিছুদূরে যেতে যেতে দুজনের হাত মিলে গেল, ওরা কাছে কাছে এল ঘেঁষে । নির্জন পথের ধারে নিচের দিকে চলেছে ঘন বন । সেই বনের একটা জায়গায় পড়েছে ফাক, আকাশ সেখানে পাহাড়ের নজরবন্দি থেকে একটুপাণি ছুটি পেয়েছে ; তার অঞ্জলি ভরিয়ে নিয়েছে অস্তস্থধের শেষ আভায়। সেইখানে পশ্চিমের দিকে মুখ করে দুজনে দাড়াল। অমিত লাবণ্যর মাথা বুকে টেনে নিয়ে তার মুখটি উপরে তুলে ধরলে । লাবণ্যর চোখ অর্ধেক বোজ, কোণ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। আকাশে সোনার রঙের উপর চুনি-গলানো পান্না-গলানে আলোর আভাসগুলি মিলিয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে ; মাঝে মাঝে পাতলা মেঘের ফাকে ফঁাকে সুগভীর নির্মল নীল, মনে হয় তার ভিতর দিয়ে, যেখানে দেহ নেই শুধু আনন্দ আছে সেই অমর্ত্যজগতের অব্যক্তধ্বনি আসছে। ধীরে ধীরে অন্ধকার হল ধন । সেই খোলা আকাশটুকু, রাত্রিবেলায় ফুলের মতে, নানা রঙের পাপড়িগুলি বন্ধ করে দিলে । g