পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ΨΟΦι" রবীন্দ্র-রচনাবলী একটা ভয় আসছে মনে। বলে, তার দেওয়া ওই কবিতাগুলো আজই কেন তোমার এমন করে মনে পড়ে গেল ।” “একদিন সে যখন আমাদের বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল তার পরে যেখানে বসে সে লিখত সেই ডেস্কে এই কবিতা দুটি পেয়েছি। এর সঙ্গে রবি ঠাকুরের আরও অনেক অপ্রকাশিত কবিতা, প্রায় এক খাতা ভরা। আজ তোমার কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি, হয়তো সেইজন্তেই বিদায়ের কবিতা মনে এল।” “সে-বিদায় আর এ-বিদায় কি একই ?” “কেমন করে বলব ? কিন্তু এ-তর্কের তো কোনো দরকার নেই। যে-কবিতা আমার ভালো লেগেছে তাই তোমাকে শুনিয়েছি, হয়তো এ ছাড়া আর কোনো কারণ এর মধ্যে নেই।” “বন্ত, রবি ঠাকুরের লেখা যতক্ষণ না লোকে একেবারে ভুলে যাবে ততক্ষণ ওর ভালো লেখা সত্য করে ফুটে উঠবে না। সেইজন্যে ওর কবিতা আমি ব্যবহারই করি নে। দলের লোকের ভালো লাগাটা কুয়াশার মতে, যা আকাশের উপর ভিজে হাত লাগিয়ে তার আলোটাকে ময়লা করে ফেলে ।” “দেখো মিতা, মেয়েদের ভালো-লাগা তার আদরের জিনিসকে আপন অন্দরমহলে একলা নিজেরই করে রাখে, ভিড়ের লোকের কোনো খবরই রাপে না । সে যত দাম দিতে পারে সব দিয়ে ফেলে, অন্য পাচজনের সঙ্গে মিলিয়ে বাজার যাচাই করতে তার মন নেই।” “তাহলে আমারও আশা আছে, বন্য । আমার বাজারদরের ছোট্টে একটা ছাপ লুকিয়ে ফেলে তোমার আপন দরের মস্ত একটা মার্ক নিয়ে বুক ফুলিয়ে বেড়াব।” “আমাদের বাড়ি কাছে এসে পড়ল, মিতা । এবার তোমার মুখে তোমার পথশেষের কবিতাটা গুনে নিই।” “রাগ ক’রো না, বন্যা, আমি কিন্তু রবি ঠাকুরের কবিতা আওড়াতে পারব না।” "রাগ করব কেন ?” “আমি একটি লেখককে আবিষ্কার করেছি, তার স্টাইল—” “তার কথা তোমার কাছে বরাবরই শুনতে পাই । কলকাতায় লিখে দিয়েছি তার বই পাঠিয়ে দেবার জন্যে ।” © “সর্বনাশ ! তার বই ! সে-লোকটার অন্য অনেক দোষ আছে, কিন্তু কখনো বই ছাপতে দেয় না। তার পরিচয় আমার কাছ থেকেই তোমাকে ক্রমে ক্রমে পেতে হবে , নইলে হয়তো—”